নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণীকক্ষে গত ৪ মার্চ (সোমবার) শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের গুলিতে ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমাল আহত হওয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। একইসঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সকল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (৬ মার্চ) এক বিবৃতিতে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, একটি স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজের শ্রেণীকক্ষে প্রকাশ্যে গুলি ছোঁড়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায় জাতি স্তম্ভিত ও চরমভাবে ক্ষুব্ধ। অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফ দীর্ঘদিন থেকেই অবৈধ অস্ত্র বহন করেন। মতের অমিল হলেই সেই পিস্তল বের করে হুমকি দেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা খুশি করতেন। বিষয়টি সবাই জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আসলে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষক পার পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে অবৈধভাবে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা জবরদখলকারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের কোথাও নিরাপত্তা নেই। এ বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
নেতৃদ্বয় বলেন, ওই শিক্ষক রায়হান শরীফ প্রায়ই সময় ছাত্র-ছাত্রীদের হয়রানি করতেন। শ্রেণীকক্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও দা, ছুরি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসতেন। শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা, কথায় কথায় হুমকি দেওয়া এবং ভয়ভীতি দেখাতেন। তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে দম্ভোক্তি করতেন। তার আচরণ কখনোই একজন শিক্ষক বা ডাক্তারের মতো ছিল না। বরং তার আচরণ ছিল সন্ত্রাসীর মতো। এসব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীরা বহুবার জানালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যার ফলশ্রুতিতেই বিনা কারণে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি চালিয়েছে ডা. রায়হান শরিফ। তিনি শুধু শিক্ষক হিসেবে নয়, পুরো জাতির জন্য কলঙ্ক। গুলিটি আরাফাত আমিন তমালের পা ভেদ করে আরেক শিক্ষার্থীর কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। একটুর জন্য আরেক শিক্ষার্থী প্রাণে বেঁচে গেছে। গুলি করার পরও শিক্ষক রায়হান দম্ভোক্তি করতে থাকে এবং গুরুতর আহত শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও বাঁধা দেয়। যা চরম অমানিক এবং অন্যায়। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, এ দেশের প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত নানা রকম অবৈধ অস্ত্র কীভাবে নিয়ে আসেন? সব জেনেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেনো? শিক্ষার্থীকে গুলির ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হানের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, ৪টি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করে। এসব তো ডাকাতের আলামত ছাড়া কিছুই নয়। শ্রেণীকক্ষে অভিভাবক-তুল্য শিক্ষকের কাছে যদি একজন শিক্ষার্থীর জীবন অনিরাপদ হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়? শিক্ষার্থীদের জান-মালের নিরাপত্তা কে দেবে? এ ধরনের জঘন্য ঘটনার দায়ভার কোনোভাবেই মেডিকেল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, এমনিতেই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাসীন-দলের ছাত্র-সংগঠন ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাসের কারণে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা-হীনতায় ভুগছে। এখন শিক্ষকও শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই একটি সভ্য দেশের চিত্র হতে পারে না। ইতিমধ্যে শিক্ষক নামের নরপশুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এ গ্রেফতার শুধু দায়সারা বা লোক দেখানো হলে তা কাম্য হবে না।অবিলম্বে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
নেতৃদ্বয় বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো মানুষ গড়ার স্থান। কিন্তু সেটিও আজ অনিরাপদ। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীকে গুলি করা মানে স্রেফ সন্ত্রাসী আচরণ। আর এ ধরনের আচরণ যিনি করেন তার শিক্ষক হওয়া তো দূরের কথা ফৌজদারি অপরাধে সবার আগে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ। বর্তমানে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে। দেশে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা বার বার অন্যায়-অপকর্ম করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো বিচার হচ্ছে না। যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকে না সেখানে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে মনসুর আলী মেডিকেলে শিক্ষার্থীকে গুলির ঘটনায় শিক্ষক সমাজ হিসেবে আমরা বিব্রত এবং লজ্জিত। আমরা শিক্ষক সমাজ মনে করি, দেশে সুসংহত গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতামূলক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৩/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.