বরিশালঃ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তির লটারির ফলাফল প্রকাশ হয়েছে গত ২৭ নভেম্বর। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক আবেদনকারী একটি জন্মনিবন্ধনের বিপরীতে একটি মাত্র আবেদন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর জন্য নিজ থানার পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দের তালিকায় রাখার সুযোগ দেয়া হয়। লটারিতে একটি মাত্র বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার কথা একজন আবেদনকারীর। তবে লটারির ফলাফলে বরিশালে একাধিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে ১৫ জনের বেশি আবেদনকারী।
বিষয়টিকে গুরুতর অনিয়ম বলছেন বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। দোষীদের শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন তারা। একটি জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে একাধিক আইডি দিয়ে যারা এ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে, তারা অন্যদের বঞ্চিত করেছে বলে মনে করেন অভিভাবকরা।
তবে অনিয়ম করে আবেদনকারীরা একাধিক স্কুলে সুযোগ পেলেও ভর্তি হতে পারবে না বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ বেলাল হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমরা টেলিটক কর্তৃপক্ষকে বলে দিয়েছি, একাধিক আবেদনকারীকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে। একাধিক আবেদন করে একাধিক স্কুলে চান্স পাওয়াদের সুযোগ নেই ভর্তি হওয়ার।’
লটারির ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কয়েকজন শিক্ষার্থীর তিনটি করে বিদ্যালয়ে নাম এসেছে। তাদের মধ্যে মনজিতা দাস নামে এক শিক্ষার্থী তার জন্মনিবন্ধনের অনুকূলে তিনটি আইডি খুলে তিনটি আবেদন করেছে। লটারিতে সে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সৈয়দ আরজু মনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। একইভাবে তাছনিম নামে আরেক শিক্ষার্থী জন্মনিবন্ধনের অনুকূলে তিনটি ইউজার আইডি ব্যবহার করে তিনটি আবেদন করে। সে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। নাদিয়া তাছনিম রোদেলা সাতটি আইডি দিয়ে আবেদন করে। লটারিতে বরিশাল সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সুযোগ পেয়েছে সে।
বিষয়টি অনিয়ম বলে দাবি করে সরকারি সাংবাদিক সুমন চৌধুরী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড আমাদের ভাবাচ্ছে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬৭৯১১৪৮৩১০৩০৯১ নম্বরের জন্মনিবন্ধনের বিপরীতে চারটি ইউজার আইডি পাওয়া গেছে। আবেদনকারী তিনটি স্কুলে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। ২০১৫৩৫১৩২৯০০৩০৪৩০ নম্বরের জন্মনিবন্ধনের বিপরীতেও চারটি ইউজার আইডি পাওয়া গেছে। সেও তিনটি স্কুলে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। এছাড়া ২০১৫০৯১১৮৬৫১১০২৫৬ নম্বরের জন্মনিবন্ধনে সাতটি ইউজার আইডি পাওয়া গেছে। সেও তিনটি স্কুলে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে।
সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দাবি, আবেদন নেয়ার সময় জন্মনিবন্ধন নম্বরকে প্রাথমিক চাবি দিলে এ ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিতে পারতেন না ওইসব অভিভাবকরা। ডাটা ডুপ্লিকেসি ফিল্টারিং করলেও এ সমস্যা হতো না।
এ বিষয়ে পটুযাখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনে একটি জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে দুই-সাতটি আবেদন করা হয়েছে। যারা তিনটি করে বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। এটা যুক্তিসঙ্গতভাবে হওয়া সম্ভব না। এ প্রোগ্রামিং করেছে টেলিটকের প্রোগ্রামাররা। তাদের ওয়েব সিস্টেম যারা ডিজাইন করেছে, ভর্তির আবেদন বিশ্লেষণ না করে এ ধরনের অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছে। এ ধরনের আবেদন সিস্টেম ডিজাইন করার ন্যূনতম ধারণা থাকলে যেকোনো প্রোগ্রামার ডাটা ডুপ্লিকেসি বন্ধ করতে পারত, তা না করায় টেলিটকের প্রোগ্রামারদের অদক্ষতার প্রমাণ মিলেছে, যা একধরনের জালিয়াতির সুযোগ করে দিয়েছে তারা। ডাটাবেজের কোনো ইন্টেগ্রিটি কনস্ট্যান্ট সেট করেনি যে ডুপ্লিকেট ডাটা সাবমিটের ক্ষেত্রে কী হবে। কম্পিউটার দোকানিদের কাছ থেকে একের অধিক আবেদন করার পদ্ধতি জানতে পেরে সুযোগ নিয়েছেন অভিভাবকরা, যা সমগ্র লটারি সিস্টেমটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম হাবিবুর রহমানের নম্বরে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে প্রোগ্রামার তানজিল আহম্মেদ এ বিষয়ে সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি। এ বিষয়ে টেলিটক মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরার্মশ দেন তিনি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.