পাঠ্যপুস্তক উৎসব নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় সরকার!

ঢাকাঃ প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে ঘটা করে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসবে’র মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়। আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২৪) জন্যও ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটির বেশি পাঠ্যবই। তবে এবার শিক্ষাবর্ষ শুরুর ছয় দিন পর সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। তাই ওই উৎসব করা হবে কিনা, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ডিসেম্বরের শুরুতেই এই উৎসবের কর্মসূচি ও অন্যান্য প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু এবার এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা থাকতে পারবেন কিনা, মূলত তা নিয়েই ওই দ্বিধাদ্বন্দ্ব। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য প্রার্থী এ ধরনের অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন না। এতে আরপিও (রিপ্রেজেন্টেটিভ পিপলস অর্ডার) লঙ্ঘন হবে। আবার অন্য কর্মকর্তারা মনে করেন, নিজ মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজ করতে কোনো মন্ত্রীর বাধা নেই। পাঠ্যপুস্তক বিতরণ প্রতিবছরের রুটিন কাজ। এটি নির্বাচন উপলক্ষে হচ্ছে, এমনটি নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের এমন বিপরীতমুখী মতামতের পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, এ বিষয়টি নিয়ে তিনি ডিসেম্বরের শেষে বসবেন। তখন সিদ্ধান্ত নেবেন।

অবশ্য শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। এর পর পাঠ্যপুস্তক উৎসবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।

‘পহেলা জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব হচ্ছে কিনা’– জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও চূড়ান্ত হয়নি, হলে আপনাদের (গণমাধ্যম) জানাব।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, পাঠ্যপুস্তক উৎসবের সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকলেও চলতি মাসের শেষে যে কোনো দিন প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবই উদ্বোধন করবেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। তিনি যেদিন সময় দেবেন, সেদিনই নতুন বই উদ্বোধন করা হবে।

এদিকে, নির্বাচনের কারণে পিছিয়ে দিয়ে আগামী ১০ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসব হতে পারে বলে খবর রটেছে। শিক্ষামন্ত্রীর একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে ওই খবর রটে। গত ২৮ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে স্কুলে ভর্তির লটারি অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কারণে বই উৎসব হয়তো ১০ বা ১১ জানুয়ারি হতে পারে। তবে উৎসবটা ঠিক ১ জানুয়ারি করব, নাকি নির্বাচনের পরে ১০ বা ১১ তারিখ হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি, যেহেতু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন।’ তবে পরে শিক্ষামন্ত্রী তাঁর এই বক্তব্য থেকে সরে আসেন। তিনি জানান, বই উৎসব পহেলা জানুয়ারিই হতে পারে।

এসব বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘তারিখ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত নয়। তবে উৎসব পহেলা জানুয়ারিই হবে ধরে নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেভাবেই কাজ করব।’

এনসিটিবি থেকে জানা যায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ ছাত্রছাত্রীর হাতে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি, প্রাথমিক স্তরের প্রায় ৯ কোটি ৫০ লাখ এবং ইবতেদায়ির বই ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৫টি। নতুন কারিকুলামের কারণে প্রতি ক্লাসে ১০টি করে বই হওয়ায় এবার ৩ কোটি বই কম ছাপানো হচ্ছে। সমকাল

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/১২/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.