‘শিক্ষানীতি বিরোধী’ কারিকুলাম বাতিল ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ অভিভাবক ও শিক্ষা-উদ্যোক্তাদের প্রতি মিথ্যাচার বন্ধ, আটককৃতদের বেকসুর খালাস, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং শিক্ষানীতি বিরোধী কারিকুলাম বাতিলের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন।

বৃহস্পতিবার সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপতিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশের অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, এ বছর ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশের সাধারণ ধারার শিক্ষায় ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে একমুখী সমন্বিত শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। আগামী বছর এটা ২য়, ৩য়, ৮ম এবং ৯ম শ্রেণীতে, এবং ২০২৫ সালে এটা ৪র্থ, ৫ম ও ১০ম শ্রেণীতে চালু হবে। এরপর ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এটা উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে চালু হবে।

এই কারিকুলামের কারণে আমাদের শিক্ষার মানের আরো যে পতন হবে সে-বিষয়ে সচেতন শিক্ষাবিদ, শিক্ষকসহ দেশ-বিদেশের বহু মানুষ বিগত ২-৩ বছর ধরে বলে আসছিলেন, লিখে আসছিলেন এবং কিছু সংগঠন নানা কর্মসূচীও গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু তাদের সেসব কথা ও যুক্তিকে উপেক্ষা করে ২০২৩ সালে এটা বাস্তবায়ন শুরু হলে অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও এটার ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে স্পষ্ট হতে থাকে। তারা নানাভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানানোর এক পর্যায়ে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে নিজ নিজ সন্তানের স্কুলের সামনে মানববন্ধন করে কারিকুলাম বাতিলসহ অন্যান্য দাবীতে একত্রিত হতে থাকে। কথা প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে তারা সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন নামের একটি ফেসবুক গ্রæপও গড়ে তোলে।

কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি, অভিভাবকদের এসব কথা ও যুক্তিকে শোনার-বোঝার চেষ্টা করা তো দূরের কথা, উল্টো এটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অনেকদিন ধরে সরকারের নানা পর্যায় থেকে তাদেরকে কোচিং-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ী, চিহ্নিত মহল, সরকার-বিরোধী ইত্যাদি বলা হয়েছে, এবং এখনও তা অব্যাহত আছে।

বিষয়টা দেশবাসীকে জানানোর জন্য বিগত ১০ই নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি মিলনায়তনে একটি প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয় এবং এর মাধ্যমে অভিভাবক সমাজ তাদের অবস্থান ও দাবীনামা উত্থাপন করেন। একইসাথে তারা স্পষ্ট করেন যে, এটা কোনো কোচিং-গাইড ব্যবসায়ীদের আন্দোলন নয়, এটা তাদের সন্তানের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বেদনা থেকে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে একত্রিত হওয়া অভিভাবকদের আন্দোলন।

সেই প্রেস কনফারেন্স থেকে ২৪শে নভেম্বর ২০২৩ তারিখ সকাল ১০টায় জাতীয় শহীদ মিনারে অভিভাবকদের মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, কর্মসূচীর ঠিক আগের দিন ২৩শে নভেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অজ্ঞাত স্থান থেকে মহানগর আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক কাজী সাইফুল হক পনির এবং টাঙ্গাইলের মধুপুরে “আলোর ভুবন” নামের ব্যতিক্রমী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়, যেটা আমরা পরবর্তীতে জানতে পারি।

এরপর “সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন” গ্রæপ ও জাহাঙ্গীর হোসেনের ফেসবুক আইডি জাহাঙ্গীর কবির থেকে পরদিনের মানববন্ধন কর্মসূচী বাতিল বিষয়ে নানা পোষ্ট দেওয়া হতে থাকে। হোয়াটস গ্রæপও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানেও নানা এলোমেলো তৎপরতা চালানো হয়। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের মোবাইল, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে না পেরে নানা ধরণের আশঙ্কা করতে থাকি। অভিভাবকসহ পুরো দেশবাসী এতে বিভ্রান্ত হতে থাকেন।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিভাবকদের জানানো হতে থাকে কর্মসূচী না করার বিষয়ে। তা সত্তে¡ও সেদিন আমরা অভিভাবকরা খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ে কিছু মানুষ নিয়ে কর্মসূচী করার বিষয়ে একমত হই এবং সে-অনুযায়ী ২৪শে নভেম্বর সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে সমেবেত হই। কিন্তু কর্মসূচী শুরু হলে অভিভাবকদের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের কর্মসূচী শেষ করতে বাধ্য করলে আমরা যার যার মতো ফিরে যাই।

সেদিন রাতেই আমরা জানতে পারি যে, আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক কাজী সাইফুল হক পনির এবং আলোর ভুবন স্কুলের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনকে সাইবার আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে, রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে, এবং মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুলের অভিভাবক তাপসী খান ও স্নাতক শিক্ষার্থী আলামীনকেও মামলার আসামী করা হয়েছে, এবং তার সাথে অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনের কথাও বলা হয়েছে। পরদিন কোর্টের মাধ্যমে আমরা মামলার কপি হাতে পাই এবং জানতে পারি আটককৃতদের ৫ দিনের রিমাÐ চাওয়া হয়েছিল এবং আদালত দুদিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেছেন।

এই মামলার বাদী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সহকারী সচিব (প্রশাসন) জনাব আলমগীর হোসেন। তিনি ২১শে নভেম্বর ২০২৩ তারিখ মতিঝিল থানায় এজাহার দিয়েছেন। এজাহারে যেসব অভিযোগ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে:

১. “… নতুন শিক্ষাক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ উহার বিষয়ে নানা ভয়-ভীতি ও উস্কানীম‚লক বক্তব্য প্রদান করে জনমনে এক প্রকারের ভীতি সঞ্চারসহ অপরাধম‚লক কার্যক্রম কতিপয় দুষ্কৃতকারী ব্যক্তি ও অজ্ঞাত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয় করিয়া আসিতেছেন যাহা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকালীন বেশ কিছু ফেসবুক পোস্ট…এর মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঢাকা বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আমি এজাহারকারীর দৃষ্টিগোচর হয়।….

২. “…আসামীগণ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাগণের নামে সোস্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার, এনসিটিবির কর্মকর্তাগণের সাথে বিনা অনুমতিতে ফোনালাপ রেকর্ড ও সোস্যাল মিডিয়ায় পাবলিক করা, উক্ত কর্মকর্তাগণকে ফোনালাপে বুলিং করা, এনসিটিবির কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদের নাম, ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করে বিদ্বেষ ছড়ানো, সামাজিক মর্যাদা হানী এবং হুমকি প্রদান, প্রেস থেকে এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক চুরিসহ উহা পাবলিক করে বিনা অনুমতিতে ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন।…”

৩. “…নিম্নলিখিত ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ হইতে যেসকল বিকৃত, বিভ্রান্তকর, উষ্কানীম‚লক কতিপয় জ্ঞাত ও অজ্ঞাত কোচিং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দ্বারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে জনগণের মনে ভীতি সঞ্চার হয় এরূপ তথ্যউপাত্ত যথাক্রমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড,… নতুন শিক্ষাক্রমসহ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সম্পর্কে প্রচার ও প্রকাশ করা হচ্ছে তার মাধ্যমে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্নসহ জনমনে নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে অপপ্রচার, এক প্রকারের ভীতি সঞ্চারসহ, বেআইনীভাবে একটি জনগোষ্ঠীকে উষ্কিয়ে অপরাধম‚লক কার্যক্রম সংগঠন করতে প্ররোচনা প্রদান করিয়া আসিতেছে…”

৪. “… জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড…এর বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সরকারের প্রণয়নকৃত শিক্ষানীতি ও নতুন কারিকুলামের অযাচিতভাবে বিরোধিতা সহ কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাহাদের অভিভাবকগণের মধ্যে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন উষ্কানীম‚লক পোস্ট, ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত হানতে পারে এরূপ স্পর্শকাতর ছবি ও ভিডিও সম্বলিত বিভিন্ন পোস্ট, ২০২৪ সনের অপ্রকাশিত বইযের নানা অংশ অবৈধভাবে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্কক বোর্ডের বিনা অনুমতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার ও প্রকাশ করে ভাইরাল ইস্যু হিসাবে দেখিয়ে জনমনে ভীতিসন্ত্রাস তৈরী করে আসিতেছেন।…”

৫. “… ভবিষ্যতে তাহাদের দ্বারা একই প্রকারের আরো আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটা সহ সাইবার অপরাধ করিবার সম‚হ সম্ভাবনা বিদ্যমান রহিয়াছে।…”

৬. “… অবিলম্বে উক্ত আসামীগণের বিরুদ্ধে ২০২৩ সনের সাইবার নিরাপত্তা আইনের ১৭/২৪/২৫/২৮/২৯/৩১/৩৩ ধারা সহ ১৮৬০ সনের দÐবিধির ৩৭৯/১০৯ ধারার অধীনে অত্র এজাহার গ্রহণপ‚র্বক এফআইআর রুজু করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প‚র্বক সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেইজ, গ্রুপ ও আইডি সম‚হ অপসারণের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ক ভীতি দ‚রীকরণের প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে জনাবের মর্জি হয়।…”

এই এজাহারের ভিত্তিতে মতিঝিল থানা মামলা গ্রহণ করে, স্মারক নং ৫৫৪০ (২), তারিখ ২২/১১/২০২৩, মতিঝিল ১৮ (১১) ২৩।

এমত পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশের অভিভাবক সমাজ বলতে চাই:

কারিকুলাম, পাঠ্যসূচী, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড তার প্রণীত কারিকুলাম বিষয়ে অভিভাবকদের মতামতে ভীত হয়ে যে অভিভাবকদের নামেই মামলা করতে পারে – এমন নজির বিশ্বের মধ্যে কোথাও আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। সন্তানের শিক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন মায়েরা-বাবারা যখন কথা বলছেন, তাদের কথা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর স্বার্থে তারা যখন রাস্তায় মানববন্ধন করছেন, তখন তাদের কথা না শুনে সরকারের নানা দপ্তর থেকে তাদেরকে অসম্মানজনকভাবে কথা বলা, হুমকি দেওয়া, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা, রিমাÐ, জামিন না-মঞ্জুর, হাজতে প্রেরণ – এগুলো কোনো সভ্য রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

১. আমরা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত অভিভাবক কাজী সাইফুল হক পনির ও শিক্ষা-উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের মুক্তি চাই, এবং তাদের মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চাই। একইসাথে এ বিষয়ে ভিন্ন মামলায় যাদের আটক করা হয়েছে তাদেরও মুক্তি চাই ও মামলা প্রত্যাহার চাই।

২. আমরা অবিলম্বে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুলের অভিভাবক তাপসী খান ও ¯œাতক শিক্ষার্থী আলামীনের নামে করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার চাই এবং অজ্ঞাতনামা তালিকায় ভবিষ্যতে কোনো অভিভাবক বা শিক্ষক বা কাউকে অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা থেকে সরে আসার আহŸান জানাই।

৩. অভিভাবক সমাজকে হেয় করা, ছোট করাসহ এ ধরণের ন্যাক্কারজনক কর্মকাÐ যারা করেছে তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহির দাবী জানাই।

৪. আমরা সন্তানের শিক্ষা জীবনের বিপন্নতায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নানা শ্রেণীপেশার মানুষের মত বিনিময়ের ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে ওঠা ফেসবুক গ্রæপ “সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন”কে নিষ্ক্রিয় করার প্রতিবাদ জানাই এবং এটাকে খুলে দেওয়ার দাবী জানাই।

৫. আমরা জাতীয় শিক্ষানীতির সাথে সাংঘর্ষিক নতুন কারিকুলাম বাতিলসহ আমাদের ৮টি দাবী মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আহŸান জানাই।

আমাদের দাবীসমূহ

১. যেহেতু শিক্ষকের মান ও জীবনমান, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ও মানসম্মত প্রশিক্ষণ যে-কোনো কারিকুলাম বাস্তবায়নের প্রধান পূর্বশর্ত এবং সেই শর্ত বাংলাদেশে প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত; এবং যেহেতু নতুন কারিকুলাম জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বিরোধী, এটা নিয়ে সংসদে বা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি, এনসিটিবি আইন-২০১৮ অনুযায়ী কোনো কমিটি গঠনের মাধ্যমেও হয়নি, এবং এটা নিয়ে শিক্ষা কর্তৃপক্ষের মধ্যে নানা বিরোধের কথা আলোচনায় এসেছে, এমনকি প্রাথমিক স্তরের কারিকুলামের ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক স্তরের কারিকুলাম তৈরীর যে অঙ্গীকার ছিল সেটাও উপেক্ষা করা হয়েছে; এবং যেহেতু এই কারিকুলাম নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন হয়েছে এবং তার শুনানীতে আদালত একাধিকবার বিব্রত বোধ করেছেন; এবং যেহেতু কারিগরী ও বিশেষায়িত ধারার বিষয়, পাঠ ও শিখন-পদ্ধতিকে সাধারণ ধারার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই শিক্ষানীতি বিরোধী নতুন কারিকুলাম সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।

২. যেহেতু শিক্ষানীতির উপর ভিত্তি করে কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়, সেহেতু রাষ্ট্র ও নাগরিকের প্রয়োজনে নতুন শিক্ষানীতি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত পুরানো কারিকুলাম ও পাঠ্যবই বহাল রাখতে হবে, এবং সে-অনুযায়ী নাম্বার ভিত্তিক ২টা সাময়িক লিখিত পরীক্ষা (৬০ নাম্বার) চালু রাখতে হবে এবং ক্লাসটেস্টগুলোকে (৪০ নাম্বার) ধারাবাহিক মূল্যায়ন হিসাবে ধরতে হবে।

৩. যেহেতু পৃথিবীর শিক্ষায় উন্নত দেশসমূহে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তর থেকেই বিষয় নির্বাচনের সুযোগ রাখা হয়; এবং যেহেতু ঐতিহাসিক কারণে বাংলাদেশের সাধারণ ধারার শিক্ষাব্যবস্থা ব্রিটিশ শিক্ষাপদ্ধতিকে অনুসরণ করে; এবং যেহেতু এদেশে ব্রিটিশ কারিকুলাম অনুসরণ করে চলা ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উত্তরোত্তর বাড়ছে, সে-কারণে কারিকুলামের সকল সংস্কার ও পরিমার্জনা মূলত ব্রিটিশ পদ্ধতিকে অনুসরণ করে করতে হবে, এবং সে অনুযায়ী নবম শ্রেণি থেকেই সকল শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা বিজ্ঞান বিভাগ রাখতে হবে। এলোমেলো কাজ ও বিষয়ের ভার দিয়ে কখনো সাধারণ ধারার শিক্ষার্থীদের ভাষা, গণিত ও বিজ্ঞান শেখাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।

৪. যেহেতু শ্রেণী বা গ্রেড, ডিভিশন বা জিপিএ, ইত্যাদি পরিভাষার পরিবর্তন শিক্ষার মান উন্নয়নের কোনো নির্দেশক বা ইÐিকেটর নয়; এবং যেহেতু শিক্ষকের মান, জীবনমান, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, প্রশিক্ষণ কোনোটাই অনুক‚লে নয়, তাই ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও মূল্যায়নের চিহ্ন-পদ্ধতি ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বা ইÐিকেটর বাতিল করে নম্বর ও গ্রেড ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখতে হবে।

৫. যেহেতু সাধারণ ধারার শিক্ষায় অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক শিখন ও প্রোজেক্ট কখনো বিষয়-ভিত্তিক টেক্সট বা ব্যাখ্যার বিকল্প নয়, বরং সহায়ক, সেহেতু এগুলোকে সহায়ক হিসাবে রেখে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ ও পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে সকল সময়ে সকল পাঠ্যবই নির্মাণ বা সংস্কার করতে হবে; এবং সকল সময় সকল শিখন, প্রোজেক্ট ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে এবং স্কুল পিরিয়ডেই সকল প্রোজেক্ট সম্পন্ন হতে হবে।

৬. যেহেতু করোনার অজুহাতে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পৃথিবীর মধ্যে প্রায় সর্বাধিক সময় একটানা ৫৪৪ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল; এবং যেহেতু সে-সময়ে প্রায় অকার্যকর অনলাইন ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীদের ব্যাপকভাবে ডিভাইসে আসক্ত করে তোলা হয়েছিল এবং সেই আসক্তি থেকে তারা সবেমাত্র বের হওয়ার চেষ্টা করছিল, সেহেতু শিক্ষার্থীদের দলগত ও প্রোজেক্টের কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে এবং তাত্তি¡ক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করতে হবে।

৭. যেহেতু পরপর ৩টি পাবলিক পরীক্ষা শিখন-সময় কমাবে, কোচিং নির্ভরতা ও অভিভাবকের ব্যয় বাড়াবে; এবং যেহেতু মেধাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ বৃদ্ধি করে; এবং যেহেতু প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে নিবন্ধনের মাধ্যমে অভিভাবকদের অর্থদÐ ও শিক্ষকদের সময়ের অপচয় ঘটবে, সেহেতু প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে নিবন্ধন ও সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু করতে হবে, এবং এসএসসি ও এইচএসসি ২টি পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে।
৮. যেহেতু সাধারণ ধারার কারিকুলামকে হতে হয় জাতির জ্ঞান, চিন্তন, সৃজন ও মননের মানের নির্দেশক বা ইÐিকেটর, সেহেতু এটার প্রণয়ন বা সংস্কারে কারিগরী বা প্রতিবন্ধী বা ধর্মীয় কোনো ধারা নয় – সকল সময়ে সাধারণ ধারাকে বিবেচনা করে করতে হবে, কারিকুলাম বাস্তবায়নের প্রধান পূর্বশর্তগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে এবং সকল সময়ে সকল শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রী পরিষদ এবং সংসদে উত্থাপন করতে হবে।

দাবীসমূহের কি-পয়েন্ট

১. শিক্ষানীতি বিরোধী নতুন কারিকুলাম সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।

২. নাম্বার ভিত্তিক ২টা সাময়িক লিখিত পরীক্ষা (৬০ নাম্বার) চালু রাখতে হবে এবং ক্লাসটেস্টগুলোকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (৪০ নাম্বার) হিসাবে ধরতে হবে।

৩. নবম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা বিজ্ঞান বিভাগ রাখতে হবে। এলোমেলো কাজ ও বিষয়ের ভার দিয়ে কখনো সাধারণ ধারার শিক্ষার্থীদের ভাষা, গণিত ও বিজ্ঞান শেখাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।

৪. ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বা ইÐিকেটর বাতিল করে নম্বর ও গ্রেড ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখতে হবে।

৫. সকল সময়ে সকল শিখন, প্রোজেক্ট ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে এবং স্কুল পিরিয়ডেই সকল প্রোজেক্ট সম্পন্ন হতে হবে।

৬. শিক্ষার্থীদের দলগত ও প্রোজেক্টের কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে এবং তাত্তি¡ক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করতে হবে।

৭. প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে নিবন্ধন ও সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে, এবং এসএসসি ও এইচএসসি ২টা পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে।

৮. সকল সময়ে সকল শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রী পরিষদ এবং সংসদে উত্থাপন করতে হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩০/১১/২০২৩  

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.