ঢাকাঃ নিজ হাতে উপার্জিত হালাল রিজিক সর্বোত্তম রিজিক। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতের উপার্জন থেকেই ভক্ষণ করতেন।’ -সহিহ বোখারি : ১৯৬৬
নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রত্যেক শ্রমজীবীই শ্রমের বিনিময়ে রিজিক উপার্জন করে, চাই সেটি সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি। একজন শ্রমিককে তার শ্রম বিনিময়ের আগে মালিকপক্ষ শ্রমের ধরন, সময় ঠিকঠাক করে তার সম্মতিতে শ্রমের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। সুতরাং কেউ যদি স্বেচ্ছায় তার শ্রমের ৪০-৫০ শতাংশ শ্রম বিনিয়োগ করে শতভাগ পারিশ্রমিক নেয় তাহলে এখানে তার কতটুকু আয় অবৈধ তা সহজে হিসাবযোগ্য। এভাবে সব পেশার নিম্ন শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চ শ্রেণি পর্যন্ত স্বেচ্ছায় যে যতটুকু শ্রম বা কাজে ফাঁকি দেবে তার আয় ততটুকু হারাম বা অবৈধ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো- একান্ত ওজর ছাড়া প্রত্যেক মজুর শতভাগ শ্রম দিয়ে তার আয়কে বৈধ করবে। আর এটিই হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ।
হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা ফরজের পর আরেকটি ফরজ।’ -বায়হাকি : ১১৪৭৫
তিনি আরও বলেন, ‘হে লোক সকল! আল্লাহতায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না।’ -সহিহ মুসলিম : ২৩৯৩
শ্রম বিক্রির মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম মাধ্যম শিক্ষকতা। শিক্ষকতার পেশা একটি মহান পেশা। বর্তমান এই পেশার অবস্থা নিয়ে একটু আলোকপাত করা হলো-
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষকের সপ্তাহে, মাসে কয়টি ক্লাস- তা নির্ধারিত। অনেকে এই ক্লাসগুলোর ৫০ শতাংশের বেশি ক্লাস নেন না। কেউ কেউ এমন আছেন যারা সপ্তাহে, মাসে দু-একটি ক্লাস নেন। বললে অত্যুক্তি হবে না, কেউ কেউ এমন আছেন যারা বিভিন্ন কাজের অজুহাত দেখিয়ে কোনো কোনো সপ্তাহে, মাসে আদৌ কোনো ক্লাস নেন না। অথচ মাসের শেষে পূর্ণ বেতন পকেটে ভরেন। তাদের এই উপার্জিত টাকা কতটুকু বৈধ? একটু ভাবুন তো!
আবার এমন অনেকে আছেন যারা প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ে প্রচুর সময়-শ্রম দেন। ক্লাসে সেভাবে দেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাকরি যেন তাদের পরিচয়ের সাইনবোর্ড। ফলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের হক থেকে বঞ্চিত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ, গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। কারণ তারা তো আর সেভাবে টাকা-পয়সা খরচ করে তাদের কাছে পড়তে পারে না।
অথচ সরকার তাদের নিয়োগ দিয়েছে দেশের সব ধনী-গরিব, শ্রমিক, দিনমজুর, অসহায়, অবহেলিত, বঞ্চিতসহ সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের সন্তানদের জ্ঞানের আলো দান করার জন্য। যে জনগণের পয়সায় সরকার তাদের বেতন দেয় তারা সেই জনগণের হক বঞ্চিত করে পকেট ভর্তি করেন। তারা কি ভাবেন না, আখেরাতে এর পরিণাম কত ভয়াবহ? অবশ্য অনেকে এর থেকে ভিন্ন। তারা ক্লাসে একটুও ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন না। নির্দ্বিধায় বলা যায়, আজ তাদের কারণেই শিক্ষার মান অনেকটাই বেঁচে আছে।
বর্তমান স্কুল-কলেজের অনেক প্রদর্শক আছেন যারা শুধু প্রতিষ্ঠানে যান আর আসেন। কোনো প্রাক্টিক্যাল বা ব্যবহারিক ক্লাস নেন না। মূলত আজ অনেক স্কুল-কলেজে এসব ক্লাসের প্রচলন প্রায়ই উঠে গেছে। আফসোস তাদের জন্য, তারা কী উপার্জন করে নিজে খান আর পরিবার-পরিজনকে খাওয়ান?
বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় হলে ডিউটিরত অনেক শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে আবার কখনো বা পরোক্ষভাবে পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকেন। ইশারা-ইঙ্গিতে হলেও পরীক্ষার্থীদের বিপদ থেকে সতর্ক করে দেন। পরীক্ষা শেষে পকেট ভরে ডিউটির সম্মানী নেন। এটি কি হালাল হবে? অনেক জায়গায় পরীক্ষা কমিটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে, কখনো বা তাদের ফাঁকি দিয়ে পরীক্ষার হলে সমাধান পৌঁছে দেন। তারাও তো পরীক্ষা পরিচালনার জন্য মোটা অঙ্কের সম্মানী নেন। তাদের এ অর্জিত রিজিক কি বৈধ? ভাবুন তো! অথচ তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ছিল পরীক্ষাকে স্বচ্ছ-সুন্দরভাবে সম্পন্নের চেষ্টা করে সম্মানী নেওয়া। আর অনিচ্ছাকৃত অনেক ত্রুটির জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
অনেক শিক্ষক আছেন যারা বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে মোটা অঙ্কের হাদিয়া গ্রহণ করে তুলনামূলক অনেক নিম্নমানের বই সরলমনা ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেন। অথচ তার থেকে অনেক উন্নতমানের বই বাজারে পাওয়া যায়। তাদের এ অপরাধ কি মার্জনীয়? পার্থিব একটু স্বার্থের কারণে তারা একটি জাতির মেধাকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। দুর্বল মেধাকে ধ্বংস করে দেয়। এ আয়কে আমরা কি প্রকাশ্যে বড় ধরনের ঘুষ বলতে পারি না?
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার ওপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)।’ -ইবনে মাজাহ : ২৩১৩
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘ঘুষদাতা-ঘুষখোর উভয়ে জাহান্নামি।’ -মুসনাদ-আল বাযযার : ১০৩৭
অনেকে মেডিকেল ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজ-কারবার করে বেড়ায়, এটিও অবৈধ ইনকাম সন্দেহ নেই।
আর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিভিন্ন দিক থেকে বৈধ-অবৈধ অনেক পয়সা পকেটে ভরার সুযোগ থাকে। কেউ কেউ বাছবিচার করে, আর কেউ করে না। পকেট ভরে হারাম পয়সায়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.