রংপুরঃ রংপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পাইলট কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। চলতি বছর ১২ জুন থেকে চালু হওয়া এ কর্মসূচিতে একদিন থাকবে ২০০ মিলি লিটার দুধ। একদিন ব্রেড। আবার একদিন দুধ ও ডিম দুটিই থাকবে। পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে চারদিন শিক্ষার্থীদের এ খাবার দেয়া হবে। এ কর্মসূচির ফলে শিক্ষার্থীদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদ্যালয়ে উপস্থিতিও নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায় পাইলট কার্যক্রমে প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতীত) আট উপজেলার নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৭৬৮ শিক্ষার্থী এ সুযোগ পাবে। রংপুর সদর উপজেলার উত্তম বারঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩০ জন। কর্মসূচি চালুর পর গড় উপস্থিতি বিগত দিনের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অনেক অভিভাবক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাদের সন্তানের ভর্তি নেয়ার জন্য। ১২ জুন থেকে শিক্ষার্থীদের প্যাকেটজাত দুধ পান করানোর পর থেকে এ পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনতে হুসাইন মোতাহ্হেরা বানু বলেন, ‘সদর উপজেলার একমাত্র তাদের বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি প্রথম শুরু হয়। এতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে এসেছে। অভিভাবকদের পক্ষে প্রত্যেকের প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ সম্ভব হয় না। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় এবং কার্যকর প্রদক্ষেপ।’ তিনি জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এ কর্মসূচির আওতায় আনার আহ্বান জানান।
এরই মধ্যে জেলার আটটি উপজেলার নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং দুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রংপুর ডেইরি অ্যান্ড প্রডাক্টস লিমিটেড (আরডি মিল্ক) সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন দুই বছর মেয়াদে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় এসেছে উত্তম বারঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২০ শিক্ষার্থী। এছাড়া তারাগঞ্জের কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীরগাছার শাহ ইসাব উদ্দিন এবং ইসহাদ ফকিরটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিঠাপুকুরের কানুদাস পাড়া, কাউনিয়ার খোর্দ্দ ভূতছাড়া, গঙ্গাচড়ার ছালাপাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীরগঞ্জের উজিরপুর এবং গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ কর্মসূচির আওতায় এসেছে।
কাউনিয়া খোর্দ্দ ভূতছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা বেগম বলেন, ‘উপজেলার মধ্যে শুধু তাদের বিদ্যালয়ে দুধ পান করানো হয়। ১৯ জুন থেকে ক্লাস শুরুর দ্বিতীয় ঘণ্টায় প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ২০০ মিলি লিটার প্যাকেটজাত দুধ পাঠানো হয়। দুধ পাঠানোর আগে বিদ্যালয়ে কতজন শিক্ষার্থী উপস্থিত আছে তা জানানো হয়। এ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে অনেক অভিভাবক বিদ্যালয়ে আসছেন তাদের সন্তানকে নতুন করে ভর্তি করানোর জন্য। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০৩ শিক্ষার্থী।’
ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. নাসিফ ফুয়াদের মা এবং সহকারী শিক্ষক নূরজাহান বেগম জানান, তার সন্তান বাসায় একদম দুধ পান করতে চাইত না। শ্রেণীকক্ষে অন্যদের দেখাদেখি এখন নিয়মিত দুধ পান করছে।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বলেন, ‘বর্তমানে আট উপজেলার নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মডেল প্রোগ্রাম হিসেব দুধ পান করানো হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আমাদের লোকজন মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে।’
রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ কর্মসূচির ফলে শিক্ষার্থীদের যেমন পুষ্টির অভাব পূরণ হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়েছে।’
সার্বিক বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘কিছুদিন আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুজন সচিব এসেছিলেন। শিগগিরই মিড ডে মিল কর্মসূচি চালুর বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.