এইমাত্র পাওয়া
অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী নাজমুল হুদা রাসে। ছবিঃ সংগৃহীত

এখনও বহাল তবিয়তে খোকসা সরকারি কলেজের সেই অফিস সহকারি

আল আমিন হোসেন মৃধা, ঢাকাঃ  সাবেক অধ্যক্ষের যোগসাজশে ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ অফিস সহকারীর‘  শিরোনামে গত ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে  শিক্ষাবার্তা’য়  খোকসা সরকারি কলেজে বেসরকারি নিয়মে কোন ধরণের ব্যাংক লেনদেন না করে নগদ লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি কলেজ প্রশাসন। বরং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আর্থিক কেলেঙ্গাকারীর যাবতীয় তথ্য উঠে আসলেও নিরব ভূমিকা পালন করছে কলেজ প্রশাসন।

জানা যায়, কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে ২০১৮ সালে তবে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয়করণের জন্য ব্যয় করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। শুধু তাই নয় এমন অগনিত ব্যয়ের হিসাব রয়েছে যেখানে কোন খাতে কত ব্যয় করা হয়েছে তার কোনো বিল ভাউচার নেই। এমনকি কোন লেনদেনই ব্যাংকের মাধ্যমে করা হয়নি। এভাবে কলেজ ফান্ডের প্রায় ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন কলেজের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মোঃ নাজমুল হুদা রাসেল। আর এই হিসাব সহকারীর নেপথ্যে রয়েছে কলেজটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) মুহঃ আনিছ-উজ-জামান। যিনি খোকসা উপজেলা বিএনপিএর সাধারণ সম্পাদক।

গত ১৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে কলেজটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির কাছে মোঃ নাজমুল হুদা রাসেলের যে হিসাব দাখিল করেছেন তা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কলেজটি নির্ভযোগ্য সূত্র বলছে, আয়-ব্যয়ের যে হিসাব তিনি জমা দিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে।

শিক্ষাবার্তা’র হাতে থাকা গত ১৫ অক্টোবর মোঃ নাজমুল হুদা রাসেল কর্তৃক স্বাক্ষরিত ঐ হিসাবের খাতায় দেখে গেছে, ২০ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়কালে কলেজের মোট আয় ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪১ টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৫১৩ টাকা। দেখানো ব্যয়ে শিক্ষকদের ঢাকা যাতায়াত খরচ, কলেজ উন্নয়ন, পিকনিক, আলমারী ও ক্যাবিনেট মেরামত, দুই দফায় জাতীয়করণ খরচ ৫ লাখ ৫২ হাজার , সাবেক অধ্যক্ষ মুহঃ আনিছ-উজ-জামানের নামে কয়েক লাখ টাকা খরচ সহ একাধিক খরচ দেখানো হয়েছে যার কোন বিল ভাউচার পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ১২ টি সোনালী সেবার যে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে সেখানেও উল্লেখ করা হয়েছে ভুলক্রমে ফাইল নোটের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়নি। আয়ের প্রায় বিশ লাখ টাকাই ব্যয় দেখানো হয়েছে ব্যয় ভাউচার ছাড়া।

অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মোঃ নাজমুল হুদা রাসেল যে আয় ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছেন সেখানে দেখা গেছে, কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) মুহঃ আনিছ-উজ-জামান অবসরের পর অর্থ নেওয়া হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার যার কোনো বিল ভাউচার নেই। তারিখ আলাদা সময়ের দেখানো হলেও এই পরিমাণ অর্থ বা তারও বেশি মুহঃ আনিছ-উজ-জামানের সময়েই নেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন কলেজটির একাধিক শিক্ষক।

কলেজের শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি’র অর্থ নিজের একাউন্টে নিয়ে তার ইউজার-পাসওয়ার্ড সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বথাকাকালীন) মোঃ বেলাল উদ্দিন একাধিক বার এই অফিস সহকারীর কাছে বুঝে চাইলেও তিনি তা দেননি। নিজের একাউন্টে বেতন ফি নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন। কত টাকা পেয়েছেন তা কেউই জানে না। শিক্ষা ক্যাডার অধ্যক্ষ যোগদান করলে তিনি একাউন্ট বুঝে দিলেও এই একাউন্টে কত টাকা লেনদেন করা হয়েছে তার কোনো হিসাব তিনি বুঝে দেননি। কলেজটির একাধিক শিক্ষক বলছেন, অন্তত এই খাত থেকে তিনি দশ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন যার কোনো হিসাব নেই।

জানতে চাইলে নিরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও সহকারী অধ্যাপক (সমাজকর্ম বিভাগ) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক  শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, অডিট কমিটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দিব। যেহেতু আর্থিক হিসাব নিকাশে কয়েকজনের নাম আসছে। তাদের থেকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে বক্তব্য নিয়ে চূড়ান্তভাবে কলেজ প্রশাসনের কাছে জমা দিব। খুব শীঘ্রই জমা দিব।

এ বিষয়ে কলেজটির সদ্য যোগদান করা শিক্ষা ক্যাডার অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহা. আব্দুল লতিফ  শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, তদন্ত করা হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। প্রতিবেদন টা পাঠিয়ে দিব। তারা এই প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নিতে পারেন আবার যদি মনে করেন অধিকতর তদন্ত করবেন সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন। এটা যে সময়ের ঘটনা তখন দায়িত্বে ছিলেন ইউএনও আমি তাকেও প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিব।

কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে কি’না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, আমি নতুন এসেছি। ঘটনা আমি আসার আগের। আমি যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেই বিষয়টি যথাযথ হবে কি’না তাই আমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছি। তারাই বিষয়টি দেখছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, একটা সরকারি কলেজে ইউএনও হিসেবে আমার কতটুকুই বা করার থাকে। যখন বেসরকারি ছিল আমার প্রতি স্বাক্ষরে বিল উঠতো। তবে নতুন যে অধ্যক্ষ আসছেন তিনি যদি আমার কাছে কোন কিছুর সহযোগিতা চান আমি তা করব।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মিজানুর রহমান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আমাকে দেন। আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখব।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হারুনর রশিদ  শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আপনাদের আগের করা নিউজ টা আমার নজরে আসেনি। নিউজটা আমাকে পাঠিয়ে দিন এবং সম্ভব হলে ডিজি স্যারকেও পাঠিয়ে দিয়েন। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.