অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুনঃ ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলেও বিভাগ উঠিয়ে দিয়ে সেটাকে একমুখী শিক্ষা নামে চালু করতে চেয়েছিল। সেই সময় অধ্যাপক জাফর ইকবালসহ অনেকেই, যার মধ্যে আমিও একজন ছিলাম, সেই শঠতার একমুখী শিক্ষার বিরুদ্ধে অধ্যাপক জাফর ইকবালের নেতৃত্বে সোচ্চার ছিলাম। সেই সময় জাতীয় প্রেসক্লাবে তিনি ‘একমুখী শিক্ষা : জাতির জন্য আশা না আশঙ্কা’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলেন। ইঙ্গিত করছেন সেটা ছিল আশঙ্কা। সেই সময় আমরা একমুখী শিক্ষা মানে মনে করেছিলাম এক ধারার শিক্ষা, অর্থাৎ সাধারণ ধারা, মাদ্রাসা, ইংলিশ মিডিয়াম এগুলো থাকবে না। সব একধারা হবে। এটা মনে করে জাতি আশান্বিত হয়েছিল, কিন্তু যখন জানলো আসল বিষয় হচ্ছে শুধু সাধারণ ধারার নবম-দশম শ্রেণীর বিভাগ উঠিয়ে দিয়ে মাধ্যমিক স্তরের বইপুস্তক-কারিকুল্যাম পাল্টানো, তখন সবাই ‘হতচকিত’ হয়ে গেছে। সেই আর্টিকেলে খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে, ‘একমুখী শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিজ্ঞান শিক্ষা’। এর পক্ষে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন যে, এসএসসি ও এইচএসসিতে মোট ৪ বছর ফিজিক্স, ক্যামিস্ট্রি, বায়োলজি, ম্যাথ পড়েও যেখানে শিক্ষার্থী উচ্চস্তরে বিজ্ঞান শিক্ষা নিতে গিয়ে ‘অসম্ভব একটা ধাক্কা খায়’ সেখানে ‘দুই বৎসর পড়ানোর পর কী অবস্থা হবে কেউ কল্পনা করতে পারবে?’ ‘একমুখী শিক্ষা আসলে বিজ্ঞান শিক্ষাকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করার একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা…।’ কেন এমন পরিকল্পনা? এ বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তুলছেন, ‘বাংলাদেশ যেন কোনোদিন বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে ভর করে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে? এটাকে যদি কেউ দেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র বলে সন্দেহ করে তাকে কী দোষ দেওয়া যায়?’
দুঃখের বিষয় হলো যিনি এর বিরোধিতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আজ তার নেতৃত্বেই এই ক্ষতিকর সিস্টেম চালু হলো। এই সরকারের আমলে এসে সেই ২০০৫ সালের একমুখী শিক্ষার নামে শুধু সাধারণ ধারার মাধ্যমিক স্তরের বইপুস্তক-কারিকুল্যাম পাল্টানো এখন আর কেউ তেমন প্রতিবাদ করছে না। কী অসভ্য দেশে বাস করছি বুঝতে পারছেন? এই দেশে কাজের বিরোধিতা হয় না। কাজটা কে করছে তার উপরনির্ভর করে আমাদের সুশীলদের প্রতিবাদ। ভাবুন তো বিএনপি সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ব্যবস্থা করে আজকে যা কিছু এই সরকার করছে তাহলে কারা এর প্রতিবাদ করতো আর কারা এর বিরোধিতা করতো? আওয়ামী লীগের সুবিধা হলো তাদের পক্ষে একটা বিশাল রাজনৈতিকভাবে অন্ধ বুদ্ধিজীবী আছে। বিএনপি জামায়াতের সেটা নেই।
আওয়ামী লীগের এই বিশাল বুদ্ধিজীবীরা আজকে নতুন শিক্ষাক্রমের একটি কথাও বলছেন না, কোনো প্রতিবাদ করছেন না। অথচ নতুন শিক্ষাক্রম তো শুধু বিএনপি-জামায়াতের সন্তানদের ক্ষতি করবে না। গোটা দেশের সাধারণ মানুষদের ক্ষতি করবে এবং এটা এমন ক্ষতি যেই ক্ষতি কোনোদিন পোষানো যাবে না। তাই আমি মনে করি, নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে বলার ট্রেন এখনো সম্পূর্ণ ছেড়ে যায়নি। সম্পূর্ণ ক্ষতি হওয়ার আগে এটিকে রুখে দেওয়ার শেষ সময় চলে যাচ্ছে।
যদিও আমি বলতে পারি এটা বেশিদিন চলবে না। এই সরকারের সৃষ্ট ‘এসো নিজে করি’, সৃজনশীল পদ্ধতিসহ আরো যেগুলো ব্যর্থ হয়েছে সেগুলোর মতো এটিও একই পথ ধরবে।
লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.