কুড়িগ্রামঃ শিক্ষক ও কর্মচারীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে বরিশালের উজিরপুরে ১৮১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেনা হয়েছে বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। চার বছর পার হলেও হাজিরা মেশিনগুলোয় কোনো সফটওয়ার ইনস্টল করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন অলস পড়ে থাকায় ইতোমধ্যে সব মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। কোনোটির শুধু আলো জ্বলে কিন্তু আঙ্গুলের ছাপ নেয় না। বাকিগুলো অচল হয়ে আছে। ফলে বিফলে গেল সরকারের পাঁচ কোটি ৩১ লাখ দুই হাজার ৩৫০ টাকা।
শিক্ষা অফিস সূত্র জানা যায়, সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন-সংস্কার (স্লিপ ফান্ড) তহবিল থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনতে বলা হয়। মেশিন কেনা হলেও দীর্ঘ সময় ধরে মেশিনগুলো চালু করা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় এক সংসদ সদস্য নিজের পছন্দের কোম্পানি থেকে নিম্নমানের বায়োমেট্রিক মেশিন কিনতে বাধ্য করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।
সরেজমিন- ইচলাদি, রাখালতলা, পূর্ব জয়শ্রী, মুন্ডুপাশা, কালবিলা, বিলগাব বাড়ি, মধ্যসাতলা, নাথারকান্দি ও জল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়- প্রতিটি বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিনই অকেজো। বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ইন্টারনেট কানেকশন থাকার কথা। কিন্তু কোথাও তা দেখা যায়নি।
নাম না জানানোর শর্তে এক শিক্ষক নেতা জানান, বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে চেকের মাধ্যমে মেশিন কেনার টাকা কোম্পানিকে পরিশোধ করা হয়। প্রতিটি মেশিন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যে কেনা হয়। যদিও বাজারে এ মেশিনের দাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। নিয়ম রয়েছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার যাচাই করে নিজেদের পছন্দমতো সাশ্রয়ী মূল্যে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনে বিদ্যালয়ে স্থাপন করবেন। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিন ক্রয়ের বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেনা এসব মেশিন কিছুসংখ্যক বিদ্যালয়ে চালু হলেও সেগুলোও কিছুদিনের মধ্যে অকেজো হয়ে যায়। শিক্ষকদের ভাষ্য, স্থানীয় সংসদ ও শিক্ষা অফিস থেকে চাপ প্রয়োগ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের হাজিরা মেশিন কিনতে বলা হয়েছিল। তখন তারা বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কিনতে বাধ্য হন। শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে নির্ধারিত কোম্পানি ও চক্রের কাছ থেকে মেশিন কেনায় বাজার যাচাইয়ের সুযোগ পাননি তারা।
খোলনা শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার মৃধা বলেন, স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে একটি প্রতিষ্ঠান বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করে গেছে। আমার স্কুলে সাত-আট হাজার টাকার মেশিনের দাম ৩০ হাজার টাকা দিতে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে অন্যত্র বদলিসহ নানা হুমকি দেয়া হয়। পরে আমি ৩০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হই। সেই নিম্নমানের মেশিন এখন অচল হয়ে আলমারিতে পড়ে আছে।
পূর্ব জয়শ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক মৃধা অভিযোগ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের মনোনীত কোম্পানি থেকে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় না করলে তিনি ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিতেন না।
তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম বলেন, মেশিনটি পরিচালনার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া করোনাকালীন সময়ে অনেক মেশিন ব্যবহার করা হয়নি। তাই কিছু মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে।
উজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন বলেন, আমি সদ্য উজিরপুর এসেছি, এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.