চট্টগ্রামঃ বর্তমানে পুঁজির অভাবে উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়া যে কী কষ্ট, পুঁজি সংগ্রহ করা যে কী কঠিন! আমি এই জেনারেশনের অংশ হিসেবে জানি, ব্যাংক আমাদের ৫ লাখ টাকাও লোন দেয় না। এটাই বাস্তবতা। এখন আমি যদি সারাদিন আপনাদের বলি উদ্যোক্তা হন, সেক্ষেত্রে ছাত্র হিসেবে আপনাকে কে টাকা দেবে?’
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘যার রেঞ্জ রোভার গাড়ি আছে তাকে মার্সিডিজ কেনার জন্য ব্যাংক টাকা দেবে। কিন্তু ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কোনো টাকা পয়সা দেবে না।’
শনিবার চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে একসময় ১০ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ডও দেয়নি ব্র্যাক ব্যাংক। তারপর যখন সরকারের মন্ত্রী হয়েছি, তখন ২০ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ডের জন্য তারা নিজেরাই রাজি হয়েছে। কারণ তখন তারা জানে, আমি যদি ঋণখেলাপী হই, নির্বাচন করতে পারব না কখনও। তাই তারা বিনা সিকিউরিটিতে ক্রেডিট কার্ড দিতে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, আমার জনগণের যে সঞ্চিত অর্থ, বিনিয়োগের নামে তা গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিচ্ছি। সাধারণ উদ্যোক্তারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এখন আমি ৫ লাখ টাকাই পেলাম না, ৫ কোটি টাকার ব্যবসা করব কোথা থেকে? তাই আমি বলব, ওই পুঁজির দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আমরা যদি দক্ষ হই, তবেই আত্মনির্ভরতা সম্ভব।’
এ সময় ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চশিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করার একটা আন্তর্জাতিক প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানে। অনেকে অর্থ খরচ করে সেই উচ্চশিক্ষা নেয়ার জন্য, সেটি যেভাবেই হোক।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইংরেজি ভাষাভাষী দেশ নিজেরা একটা র্যাঙ্ক টেবিল বানিয়েছে নিজেদের কিছু পত্রিকাকে দিয়ে। সেই র্যাঙ্কিং তারাই করে, সেখানে ইংরেজি ভাষার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুব কম স্থান দেয় তারা। সেখানে পড়তে গেলে আমাদের শতকোটি টাকা ব্যয় হয়ে যায়। তারা মনে করে, তারা একটা উচ্চশিক্ষার বাজার সৃষ্টি করেছে।’
শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনে দিকেও জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে প্রতিবছর। বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে শুধু দেশের অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত করার কথা নয়, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তৈরি করার কথা। গ্লোবাল সিটিজেন হওয়ার জন্য মানসিকতা থাকতে হবে সবার। আমাদের দৃষ্টিসীমা সেভাবেই নির্ধারণ করতে হবে। এই ভূখণ্ডে আমি নিজেকে আবদ্ধ রাখব না, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে সারা বিশ্ব আমার কর্মক্ষেত্র হবে। সেখানে আমি যেন কাজ করতে পারি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা যথেষ্ট নয়।’
‘যথেষ্ট নয় এজন্য যে, আমরা যখন কর্মক্ষেত্রে যাই, আমাদের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী কাজ করতে পারেন না। ১ শতাংশেরও কম শিক্ষকতা ও গবেষণায় যান। কর্মক্ষেত্রে আমরা যখন যাই, সেক্ষেত্রে যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা নিয়েছি, তা যথেষ্ট নয়। সেটা কর্মজীবনের জন্য যথেষ্ট উপযোগীও নয়। এই শিক্ষার প্রয়োগিক মূল্য খুব কম।’
এ সময় সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘স্ট্যানফোর্ডে স্টিভ জবস স্নাতকদের উদ্দেশে বলেছিলেন- অন্যকে নকল করতে গিয়ে সংক্ষিপ্ত এই জবন নষ্ট করো না। তোমার মনে যা আসে তাই করবে। তোমার বিবেক যা বলবে তাই করবে। তোমার মস্তিষ্ক যা চিন্তা করে তাই করবে। আজকের স্নাতকদের প্রতিও আমার একই আহ্বান।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.