এইমাত্র পাওয়া

সম্পত্তি লিখে বাবা-মাকে বাড়ি ছাড়া করল ৩ ছেলে

নেত্রকোনাঃ নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে ছোট একটি ঝুপড়ি ঘর। চারদিক মোড়ানো প্লাস্টিকের বস্তায়। তাতেই ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মার। পেটের ক্ষুধাই তাদের করতে হয়েছে ভিক্ষাও। জীবনের শেষ বয়সে এসে এভাবেই অসহায় দিন কাটছে নেত্রকোণার দুর্গাপুরের ওই বৃদ্ধ দম্পতির।

কৌশলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন ৩ ছেলে। এমনকি ছেলের বউ দিয়েছে টাকা চুরির অপবাদ। তাই শেষ পর্যন্ত বাড়ি ছাড়তে হলো এই বৃদ্ধ বাবা-মাকে।

নেত্রকোণার দুর্গাপুরের পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুরেশ চন্দ্র দাস ও বেলি রাণী দাস। বাড়িঘর সবকিছু থাকা সত্ত্বেও এখন নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন তারা। নদীর পাড়ে শাড়ি আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর তাদের একমাত্র সম্বল। তাতেই চলছে মানবেতর জীবনযাপন।

বেলি রাণী দাস জানান, চার ছেলে সন্তান নিয়েই ছিল তাদের সংসার। স্বামী ছিলেন সহজ-সরল। সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে শেষ সম্বলের ২০ শতাংশ জায়গার ১৮ শতাংশ তিন ছেলে শ্যামল, সাগর ও সজল তাদের নামে লিখে নিয়েছে। সবার বড় ছেলে পরিমল বাবা মতোই সরল হওয়ায় তাকে দেয়নি কিছুই। সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর যখন ছেলেদের সঙ্গেই তাদের ঘরে থাকতে হয়েছে। সে-সময় প্রায়ই না খেয়েও থেকেছেন।

আবার পেটের তাগিদের ভিক্ষা করেও খাবার জোগাতে হয়েছে। এরপর একদিন তাদের ঘরের টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলের বউ ঘর থেকে লাত্তি মেরে বের করে দেওয়ার কথা বলে। এইসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই বাড়ি ছেড়ে এখন বাড়ির সামনে নদীর পড়ে কাপড় আর টিনের তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বেলি রাণী দাস আরো জানান, তারার ঘরো রাইখা আমারে কয়েকদিন ভাতও দিছে না। রান্না কইরা তারা খাইয়া গেছে গা পরে আমি নিজে নিজে লাইয়া খাইছি। কয়েকদিন পরে ঝগড়া লাইগা ছেলের বউ আমারে লাত্তিয়া ঘরতে বাইর করে আর আমারে কই আমি তারার ঘরের এইটা-ওইটা চুরি কইরা লাই তারার ঘরো টাকা রাখলে টাকা থাহে না। পরে আমি কইছি এহন ২০০ টাকা নাই আরেকদিন কইবো, তারার দরজা খোলা আছিন ৫ লাখ টাকা নাই, আমি চুরি করছি। তাই এই লজ্জায় বাড়ি ছাইরা এইনে এই ঘরো থাকতাছি, বৃষ্টি আইলে ঘরের ভিতরে পানিও পড়ে।

সুরেশ চন্দ্র দাস জানান, তিন ছেলে তার টিপসই নেন। এরপর তিন ছেলে মিলে যা শিখিয়েছে তাই বলেছেন। এভাবেই যে সম্পত্তি তারা নিজেদের নামে লিখে নিয়েছে তিনি বুঝতেই পারেননি।

বৃদ্ধ এই দম্পতির বড় ছেলে পরিমল চন্দ্র দাস জানান, তিন ভাই বাবার সব জায়গা তাদের নামে লিখে নেয়ার প্রায় এক বছর পর তিনি জানতে পেরেছেন। পরবর্তীতে তিন ভাই জায়গা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও আর দেয়নি।

মেজ ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাস জানান, বাবা-মায়ের সব অভিযোগই মিথ্যা। বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জায়গা লিখে দিয়েছেন। আর বাড়ি ছাড়া আমরা করেনি। তারাই সেখানে গিয়ে থাকছেন। আমি প্রতিমাসে টাকাও দিচ্ছি। তারই বউয়ের দেওয়া ঘর থেকে টাকা চুরির অপবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কথাটি এড়িয়ে যান তিনি।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আকরাম খান জানান, তিন ছেলে মিলে তাদের বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেয়ার ঘটনাটি সত্যি। তিনি তিন ছেলেকে অনেকবার বলেছেন কিন্তু তারা কিছুই শুনেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৯/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.