এইমাত্র পাওয়া

নিষিদ্ধ শিক্ষককে নিয়োগ বোর্ডে রাখার তোড়জোড়

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ পরীক্ষার ফলে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া শিক্ষককে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে রাখতে তোড়জোড় চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই শিক্ষক ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। গত বছরের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক নিষিদ্ধ হন তিনি।

জানা যায়, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে লেকচারার পদে দুজন শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা গত ১৭ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তা স্থগিত করে দেন বোর্ডের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। নিয়োগ বোর্ডে চেয়ারম্যান ক্যাটাগরিতে থাকার কথা ছিল অধ্যাপক বাহাউদ্দিনের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ভাইভা স্থগিত করে পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ হয়েও শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে থাকতে পারেন কিনা এ বিষয়ে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আইন উপদেষ্টার মতামত চাওয়া হয়। মতামতে থাকতে পারবেন না বলে মত দেন আইন উপদেষ্টা। পরবর্তী সময়ে উপাচার্যের চাওয়ায় আবার থাকার পক্ষে মত দেন তিনি। এরপর এই শিক্ষককে রেখেই শিগগিরই ভাইভার তারিখ ঘোষণা করার তোড়জোড় চলছে।

এদিকে, যেসব শিক্ষার্থীর ফলে অনিয়ম করা হয়েছে তাদের মধ্যেও কয়েকজন প্রার্থী হিসেবে ভাইভায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এতে ভাইভা বোর্ডে অনিয়মের আশঙ্কা করছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক বাহাউদ্দিন নিয়োগ বোর্ডে থাকতে পারবেন বলে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তবে শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, একজন শিক্ষক যেখানে বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ তিনি আবার শিক্ষক নিয়োগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় বোর্ড মেম্বার হিসেবে কোনোভাবেই থাকতে পারেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রমে থাকার যোগ্যতা হারান তিনি। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড এর বাইরে কিছু নয়। বরং এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। কোনোভাবেই তিনি এখানে থাকার যোগ্যতা রাখেন না। অধ্যাপক বাহাউদ্দিন যদি নিয়োগ বোর্ডে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে অনিয়মের শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে অধ্যাপক বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গবেষণার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তিনি একই গবেষণা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এমফিল এবং পিএইচডিতে ব্যবহার করেছেন। এমফিল গবেষণায় ব্যবহৃত শিরোনামের সামান্য পরিবর্তন করে ব্যবহার করেছেন পিএইচডি গবেষণায়। একই লেখা দিয়ে নিয়েছেন দুই ডিগ্রি। তিনি নিজের এমফিল গবেষণায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতি-কবিতা, বক্তব্য পিএইচডি গবেষণায় ব্যবহারের সময় রেফারেন্স উল্লেখ করেননি। একই গবেষণায় এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে দ্রুততম সময়ে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি দৃষ্টির অগোচরে থাকলেও সম্প্রতি বিষয়টি আবার প্রকাশ্যে আসে। গতকাল মঙ্গলবার ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন উপাচার্য বরাবর। এতে বলা হয়, অধ্যাপক বাহাউদ্দিনের দুটি শিরোনামে একই গবেষণা প্রকাশ হয়েছে। প্রথমে এমফিল থিসিস সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এই থিসিস থেকে অসংখ্য উদ্ধৃতি ও অনুচ্ছেদ হুবহু পিএইচডি থিসিসে ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়নি, যা অ্যাকাডেমিক বিচারে গুরুতর চৌর্যবৃত্তিমূলক অপরাধ। একই ধরনের লেখা বা তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে দুটি অভিসন্দর্ভ সম্পন্ন করে দুটি ডিগ্রি অর্জন করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযোগপত্রে এমফিল ও পিএইচডি থিসিসে ব্যবহৃত রেফারেন্সবিহীন উদ্ধৃতি, হুবহু সাদৃশ্য ও আনুষঙ্গিক বিষয় সংবলিত ৩৩ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ ফলাফল সারসংক্ষেপ পরিসংখ্যান আকারে তুলে ধরেন তিনি।

এ বিষয়ে সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ বলেন, অধ্যাপক বাহাউদ্দিন যে এমফিল ও পিএইচডি করেছেন সেটা একই বিষয়ের ওপরে। এসবের ভিত্তিতে তিনি অতি দ্রুত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এর আগেও তার নামে অনেক অভিযোগ এসেছে, বিভিন্ন অডিও রেকর্ডও ফাঁস হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তার বিরুদ্ধে বড় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আমি চাই তার বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।

নিয়োগ বোর্ডের বিষয়ে অধ্যাপক বাহাউদ্দিন বলেন, এটি সিন্ডিকেট কর্তৃক নির্ধারিত। বিভাগের চেয়ারম্যান ভাইভা বোর্ডে থাকবেন। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে গবেষণা জালিয়াতির বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। তবে, এ জায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতাম। কারণ, শিক্ষক হিসেবে সবার আগে আমাদের আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা ঠিক রাখতে হবে। গবেষণা জালিয়াতির বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ভাইভাটি স্থগিত আছে। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই এবং সিদ্ধান্ত নেই। তবে একই টপিকে এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার বিপক্ষে মত দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান  বলেন, একজন সাবেক শিক্ষক গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগটি দিয়েছেন। আমরা সেটি পরীক্ষা করে দেখব। নিয়োগ বোর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি থাকতে পারেন। বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা আলাদা। সূত্রঃ দেশ রূপান্তর

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩০/০৮/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.