এইমাত্র পাওয়া

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন: ভবনই হয়নি, আসবাবসরঞ্জাম কেনা শেষ

ঢাকাঃ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩২০টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করার কথা। কিন্তু সাড়ে ছয় বছরে নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র একটি। এই অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ আবার বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্যয়ও। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ভবন নির্মাণে তেমন অগ্রগতি না হলেও প্রকল্পের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি, আসবাব ও অফিস সরঞ্জাম কেনাকাটার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে শতভাগ। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় কেনা খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণও শেষ। এসব কেনাকাটা হয়েছে কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই চড়া দামে।

এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থার চিত্র উঠে এসেছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) দ্বিতীয় সভার কার্যবিবরণীতে এবং প্রকল্প পরিচালকের দেওয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে। গত ৩০ মার্চ পিইসির ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম।

প্রকল্পের এমন নাজুক দশায় ক্ষুব্ধ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার। তিনি বলেন, প্রকল্পের এমন দশা খুবই দুঃখজনক। সাধারণত প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতায় প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। এ প্রকল্পের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানা যায়, ৩২০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ এবং ১০২টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ইন্টারনেট সুবিধা, মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা উপকরণ ও আইসিটি ল্যাব স্থাপনেরও লক্ষ্য ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা।

সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্প নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। তাই প্রকল্পটি এমন বেহাল। আর প্রকল্পের মালপত্র (আসবাব, খেলাধুলার সামগ্রী, অফিস সরঞ্জাম) কেনাকাটায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করায় বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় জেলা পর্যায়ে ১৭২টি এবং উপজেলা পর্যায়ে ১৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন বানানোর কথা। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সাড়ে ছয় বছরে মাত্র একটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ১৬২টি একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ স্থগিত আছে, দরপত্র অনুমোদিত হয়েছে ১৪২টি এবং ৪টি অনুমোদনের অপেক্ষায়। এ ছাড়া ২টি বিদ্যালয়ে জায়গা নিয়ে আর ১০টি বিদ্যালয়ে স্থানীয় সমস্যার কারণে কাজ আটকে আছে।

প্রকল্পের অধীনে ২৪টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ করার কথা। এগুলোর ২১টির দরপত্র ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টির কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ শেষ হয়েছে ৭২টি ভবনের, বাকিগুলোর কাজ চলছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণ ও পূর্ত কাজের গড় বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ।

প্রকল্পের এমন ধীরগতিতে পিইসি সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সভায় বলা হয়, প্রকল্পটির ধীরগতির কারণ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, নানা কারণে প্রকল্পের ধীরগতি। এসবের মধ্যে আছে করোনা, অর্থ ছাড়-সংক্রান্ত জটিলতা ও কাজের রেট শিডিউল পরিবর্তন।

নজর বেশি কেনাকাটায়অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এরই মধ্যে প্রকল্পের জন্য সাড়ে ছয় কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আছে ৩ কোটি টাকার ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি, ৩ কোটি ২০ টাকার খেলাধুলার সামগ্রী, ১৬ লাখ টাকার আসবাব এবং ১১ লাখ টাকার অফিস সরঞ্জাম। এসব কেনাকাটা হয়েছে কোনো রকম দরপত্র ছাড়াই, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে। পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে, এসব কেনাকাটার ব্যয় অত্যধিক।

সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনাকাটা করায় পিইসি সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতাধীন সব পণ্য ও সেবা ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ ও বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণ করে ক্রয় পরিকল্পনা গঠন, ক্রয় পদ্ধতিতে একটি পদ্ধতি উল্লেখসহ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে আরডিপিপি পুনর্গঠন করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে পছন্দের সরবরাহকারীকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে। এ প্রকল্পেও বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে এমন অনিয়ম হয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারেরা মাউশিতে অভিযোগও দিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, যারা কাজ পায়নি, তারাই অনিয়মের কথা বলছে। তাঁর দাবি, শুধু গাড়িগুলো প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে সরাসরি কেনা হয়েছে। অন্য কেনাকাটা নিয়ম অনুযায়ীই করা হয়েছে।

ব্যয় বাড়ছে ৩২ শতাংশ জানা যায়, প্রকল্পের মেয়াদ আগেই দুই বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু তাতেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরও সাড়ে তিন বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং ব্যয় ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়বে ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব ও কোনো সমীক্ষা ছাড়াই ভবন নির্মাণের কারণে পরিকল্পনা কমিশন অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ব্যয় বাড়ানোর যুক্তিসংগত কারণ আরডিপিপিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক অবশ্য পিইসি সভায় উল্লেখ করেছেন, ৬ তলার পরিবর্তে ১০ তলা ভবন নির্মাণ, ডিজাইন পরিবর্তন, কাজের রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বাড়ানোর এই প্রস্তাব। তবে এতে সন্তুষ্ট হয়নি পরিকল্পনা কমিশন। তারা বলছে, ১০ তলা ভবন নির্মাণের চাহিদা নিরূপণের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আরডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে।

ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ এ প্রসঙ্গে সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) বলেন, সাড়ে ছয় বছরে মাত্র একটি ভবন নির্মাণ হওয়ার বিষয়টি অবিশ্বাস্য। বাস্তবে এমন হয়ে থাকলে বুঝতে হবে, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মহা অযোগ্য। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সূত্র আজকের পত্রিকা

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩০/০৮/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.