প্রভাষক পদে মাউশি এমপিও স্থগিত করলেও অধ্যক্ষ পদে বেতন দিচ্ছে ডিএমই
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে আরবি প্রভাষক পদে অবৈধভাবে পদায়ন এবং সেই প্রতিবেদনের আলোকে আরবি প্রভাষক পদের বেতন ভাতা স্থগিত এবং আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলেও সেই তথ্য গোপন করে এবং সুকৌশলে অন্য একটি মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়ে দশ বছরেরও অধিক সময় ধরে সরকারি অর্থের তছরুপ করছেন বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ইসলামপুর ভূস্কুর সিদ্দিকীয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেন।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন ১৯৮৯ সালে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার নাংলু এম কে এম ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী পদে নিয়োগ পান এবং এমপিওভুক্ত হন। এরপর ১৯৯৭ সালে কোনো ধরণের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি (শুধুমাত্র কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে) প্রভাষক (আরবি) পদে পদায়ন করা হয়। অর্থ্যাৎ বিধিতে না থাকলেও তিনি সহকারী মৌলভী থেকে সরাসরি পদায়ন পান প্রভাষক পদে। ১৯৯৭ সালের পহেলা জুন প্রভাষক (আরবি) পদে যোগদান করেন এবং একই বছরের ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসে এমপিওভুক্ত হন।
১৯৯৫ সালের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালের আগের মাদ্রাসার বিদ্যমান পদসমূহের মধ্যে কিছু বিলুপ্ত হয়। বিলুপ্ত পদে কর্মরত শিক্ষকগণ উদ্বৃত্ত শিক্ষক হিসেবে ঘোষিত হন। এমতাবস্থায় ১৯৯৫ এর জনবল কাঠামো জারীর ফলে সৃষ্ট পদে এবং বিদ্যমান পদ শূন্য হলে তদস্থলে উদ্বৃত্ত ঘোষিত শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পদায়ন করার নিদের্শনা রয়েছে। মূলত ১৯৯৫ এর জনবল কাঠামো বিধি জারীর ফলে যে পদ বিলুপ্ত হয়নি তাহা উদ্বৃত্ত পদ হিসেবে গণ্য হবে না। বিধায় উক্ত পদে কর্মরত কোন শিক্ষক পদায়নের সুযোগ পাবেন না। অর্থ্যাৎ যে পদ বিলুপ্তি হয়েছে সেই পদের বিপরীতে যোগ্যতা সাপেক্ষে শুধুমাত্র শূন্য পদে পদায়ন পাবেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রভাষক পদে অবৈধ হলেও মোঃ মোশাররফ হোসেন ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখ পর্যন্ত প্রভাষক পদে কর্মরত ছিলেন এবং সরকারের এমপিও অংশ উত্তোলন করেছেন। এরপর তিনি ১৪ ফেরবুয়ারি ২০১১ ইং তারিখে নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশক্রমে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ইং তারিখের নিয়োগের প্রেক্ষিতে কর্মরত একই মাদ্রাসায় (নাংলু এম কে এম ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা) উপাধ্যক্ষ পদে (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ইং তারিখে) যোগদান করেন। তবে এখানেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উপাধ্যক্ষ পদ বাগালেও আরবি প্রভাষক পদে অবৈধভাবে চাকরি করার বিষয়টি সামনে আসে উপাধ্যক্ষ পদের এমপিওভুক্তির সময়। তার আরবি প্রভাষক পদে পদায়ন অবৈধ হওয়ায় তিনি উপাধ্যক্ষ পদে এমপিওভুক্ত হতে পারেননি।
০২ জুন ২০২১ ইং তারিখে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক মোঃ নেয়ামত উল্লাহর সরেজমিন তদন্তে এবং অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেবদুলাল ভট্টাচার্য ০১ ডিসেম্বর ২০১১ ইং তারিখে স্বাক্ষরিত এবং প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে আরবি প্রভাষক পদে মোঃ মোশাররফ হোসেনের অবৈধভাবে পদায়নের বিষয়টি সামনে আসে। আর এই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ২৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বিশেষ) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে জানানো হয়, বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলাধীন নাংলু এম.কে.এম ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ পদে মোঃ মোশাররফ হোসেন এর এমপিওভুক্তিতে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টের পূর্বেকার নিয়োগে জটিলতা থাকায় বর্তমানে উপাধ্যক্ষ পদে এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই- মর্মে তাঁকে অবহিত করা হল। মাউশির উক্ত চিঠির স্বারক নম্বর- ১জি-১১২৯-বিঃ/২০০৭/২৭৬৩/১ তারিখঃ ২৩/০৪/২০১২।
উপাধ্যক্ষ পদে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না জেনে ২৩ এপ্রিল ২০১২ ইং তারিখে নন্দীগ্রাম উপজেলার ইসলামপুর (ভূক্ষুর) সিদ্দিকিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ৩১ মে ২০১২ ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (স্বারক নং- ৯এ/১৮/অডিট/১২/ তারিখ ৩১/০৫/২০১২ ) সহকারী পরিচালক (বিশেষ) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলাধীণ নাংলু এম, কে, এম সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের প্রভাষক মোঃ মোশাররফ হোসেন এর ইনডেক্স নম্বর ৩৮০১৪৫ এর বেতন-ভাতার সরকারি অংশ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থগিতরাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে আরবি প্রভাষক পদে অবৈধ চাকরি, মাউশির একটি চিঠিতে উপাধ্যক্ষ পদে এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই উল্লেখ, অন্য চিঠিতে আরবি প্রভাষক পদের এমপিও স্থগিত থাকলেও অধ্যক্ষ পদে মোঃ মোশাররফ হোসেন নিয়মিত বেতন ভাতা পেয়ে যাচ্ছে টানা দশ বছরের বেশি সময় ধরে। গত ৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক ইমন আমির স্বাক্ষরিত চিঠিতে অধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেন এর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে চিঠি ইস্যু করে। এই তদন্ত কমিটিতে সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, বগুড়ার সহকারী অধ্যাপক ড. আৰু জাফর মুহাম্মদ ইউসুফ ও একই মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক জি এম শামছুল আলমকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ থেকে ০১ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ পর্যন্ত তদন্ত করে মাদ্রাসা অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমাদেন তারা। সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে তার অনিয়মের বিস্তারিত উঠে এসেছে এবং অধ্যক্ষ পদে তার নিয়োগ অবৈধ এবং এমপিও পাওয়ার অযোগ্য তা তুলে ধরা হয়েছে।
এত কিছু স্বত্তেও অধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেন বহাল তবিয়তে আছেন এবং বেতন-ভাতার সরকারি অংশ উত্তোলন করছেন। তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (অর্থ) ও এমপিও বাছাই ও অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব মোঃ লুৎফর রহমান শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, সারাদেশেই তো তদন্ত হচ্ছে। এই মাদ্রাসার তদন্তের বিষয়টি আমার দপ্তরে নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ জাকির হোসেন শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বিষয়টি দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৮/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়