দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিত্সা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে ২৩৮৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ভেজাল খাবারসহ নানা কারণে দেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একে প্রতিরোধ করা জরুরি। এ কারণে প্রতিটি বিভাগে ক্যানসার চিকিত্সাকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে।
সভায় জানানো হয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি) এর সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে মারা যায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ। প্রতিবছর এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশের পুরাতন আটটি বিভাগীয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সবগুলোতে পূর্ণাঙ্গভাবে ক্যানসার চিকিত্সা, কেমোথেরাপির ব্যবস্থা চালু নেই। একমাত্র জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালটি রাজধানী কেন্দ্রিক। বেসরকারি খাতে বড়ো কিছু হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিত্সা থাকলেও এর খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ১০ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি রেডিওথেরাপি চিকিত্সা সুবিধা সংবলিত ক্যানসারসেবা কেন্দ্রের প্রয়োজন। অর্থাত্ বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর জন্য দেশে ১৬০টি ক্যানসার চিকিত্সাকেন্দ্রের প্রয়োজন।
আলোচ্য প্রকল্পটির মাধ্যমে বিভাগীয় আটটি মেডিক্যাল কলেজে দুই তলা বেজমেন্ট ও ১৫ তলা ফাউন্ডেশনসহ ১৭ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে। চলতি অর্থবছর শুরু করে ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
একনেক সভায় ৮৯৬৮ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি সংশোধিত। সভায় ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারতের ঝাড়খন্ড হতে বাংলাদেশে ১৪৯৬ মে.ও. বিদ্যুত্ আমদানি করার লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো : ৮৫৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ (রঘুরামপুর)-ফুলপুর-নকলা-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ৩২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী-নওহাটা-চৌমাসিয়া সড়কের বিন্দুর মোড় হতে বিমানবন্দর হয়ে নওহাটা ব্রিজ পর্যন্ত পেভমেন্ট চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ১২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর উপশহর মোড় হতে সোনাদীঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় হতে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প (২য় সংশোধিত) এবং ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্ট্রেংদেনিং মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ক্যাপাবিলিটিজ অব আইএমইডি (এসএমইসিআই) প্রকল্প (৩য় সংশোধিত)।
প্রকল্পের কেনাকাটায় সতর্ক থাকার নির্দেশ
সভায় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, উন্নয়ন প্রকল্পে কেনাকাটার সময় তিনি আরেকটু সতর্ক হতে বলেছেন। তাছাড়া মান বজায় রেখে সড়কের কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শহরের রাস্তা প্রশস্ত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে খুব বেশি বাড়িঘর বা দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কোনো প্রকল্পে ত্রুটি বা সংশোধনের বিষয় থাকলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা তা দ্রুত ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে সেখানে পুকুর/জলাশয়, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, প্রচুর গাছ এবং খেলার মাঠ ইত্যাদি থাকে। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.