এইমাত্র পাওয়া

শাড়ি নিয়ে লিখে সমালোচনায় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

বাঙালি নারীর পোশাক শাড়ি নিয়ে একটি লেখার জন্য ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ। গত ৩০ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ওই লেখা প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায়; তার ‘পুরুষতান্ত্রিক’ দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন নারী অঙ্গনের নেতৃস্থানীয়রাও।

 

অশীতিপর এই অধ্যাপক ‘শাড়ি’ শিরোনামে তার ওই লেখা শুরু করেন এভাবে- ‘শাড়ি পৃথিবীর সবচেয়ে যৌনাবেদনপূর্ণ অথচ শালীন পোশাক।’ তিনি লিখেছেন, ‘আধুনিক শাড়ি পরায় নারীর উঁচু-নিচু ঢেউগুলো এমন অনবদ্যভাবে ফুটে ওঠে, যা নারীকে করে তোলে একই সঙ্গে রমণীয় ও অপরূপা।

 

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখাটির নিচে মন্তব্যে চৈতালি খান নামে একজন লিখেছেন, ‘লেখকের সাথে একমত হতে পারলাম না। কেমন যেন একপেশে আর পুরুষতান্ত্রিক লাগল পুরো লেখাটা। আপনাদের চোখের শান্তি ছাড়া অন্য কোনো কাজ নাই বাঙালি মেয়েদের?’ হাসান মাহবুব নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘নারীদের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আহত হলাম।’ অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষার্থী মহলে প্রিয় আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ টিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় এসে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার হাত ধরে ১৯৭৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

 

এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখায় ২০০৫ সালে তাকে একুশে পদক দেয় সরকার। ‘আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে’ কাজ করে যাওয়া সেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের শাড়ি নিয়ে লেখার কড়া সমালোচনা করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় অপরাজিতা সংগীতা।

 

তিনি লিখছেন, সকালটা শুরু হলো আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের চরম সেক্সিস্ট ‘শাড়ি’ লেখাটি পড়ে। এই লেখাটির মাধ্যমে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ প্রমাণ করলেন ‘আলোকিত মানুষ চাই’ স্স্নোগান দিলেই ‘আলোকিত মানুষ’ হওয়া যায় না। আচ্ছা, এই যে তিনি শাড়ি নিয়ে লেখার নাম করে নারী শরীরের আনাচে কানাচের রগরগে বর্ণনা দিলেন, ইঞ্চি ফিতা দিয়ে নারী শরীরের মাপঝোঁক করলেন; এটা কি প্রথম? নাকি আগেও করেছেন? এই লেখাটি সংবাদপত্রে প্রকাশের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অধিকারকর্মী খুশি কবির। তিনি বলেন, এটা কী ছাপানোর যোগ্য ছিল?

 

কীভাবে এই লেখাটা ছাপায়? খুশি কবির বলেন, উনি খুব বড় মাপের মানুষ। উনি অনেক ভালো কাজ করেছেন। এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। তবে সব মানুষের তো সব গুণ থাকে না। ওনার লেখাটায় মধ্যযুগীয় পিতৃতান্ত্রিক-সামন্ততান্ত্রিক প্রতিফলক আছে। আসলে ওনার কাছ থেকে চাওয়ার কিছু নেই। আমাদের ওনার কাছ থেকে চাওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে। নারী ও সমাজ সম্পর্কে নারীদের মনোভাব জানতে অধ্যাপক আবু সায়ীদকে পরামর্শও দিয়েছেন খুশি কবির। তিনি বলেন, আমি এই লেখাটা পড়তে গিয়ে বারবার রেগে যাচ্ছিলাম। রাগ নিয়ন্ত্রণ করেই লেখাটা পড়েছি। উনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, পুরুষ নারীকে যৌনতার দিক থেকে দেখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম বলেন, উনার মতো একজন ব্যক্তির কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে এমন লেখা প্রত্যাশিত না।

 

তিনি নারীকে পণ্য হিসেবে দেখেছেন। নাট্যকার-নির্দেশক মাসুম রেজা ফেসবুকে লিখেছেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখাটি পড়ার পর তার ‘অনুশোচনা’ হচ্ছে। ‘তার লেখা তিনি লিখেছেন.. তবে এই লেখার নিচে একটা ফুটনোট দেয়া উচিত ছিল যে, শাড়ি কীভাবে সবচেয়ে যৌনাবেদনপূর্ণ শালীন পোশাক, তা দেখার ছলে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না, শাড়ি পরলে নারীর উঁচু-নিচু ঢেউগুলো কেমন অনবদ্যভাবে ফুটে ওঠে, তা দেখারও চেষ্টা করবেন না, শাড়ি কীভাবে শরীরের অসম অংশগুলোকে লুকিয়ে ও সুষম অংশগুলোকে বিবৃত করে বা নারীর শরীরে সৌন্দর্যের প্রতিটি ঢেউ আর সরণিকে আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু ভঙ্গিতে বিন্যস্ত করে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করবেন না..’ কেন আমি স্যারের লেখাটা পড়লাম এই ভেবে আমার অনুশোচনা হচ্ছে..।

 

মাসুম রেজার ‘অনুশোচনা’ হলেও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখায় ‘ভুল’ কিছু পাননি নাট্য নির্দেশক ও অভিনেত্রী নুনা আফরোজ। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, শাড়ি নিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যা লিখেছেন আমার কাছে ঠিকই লেগেছে। শাড়ি নিয়ে উনি ভুল কিছু তো লেখেননি। শাড়ি নিয়ে আমাকে কিছু লিখতে হলে আমিও হয়তো এমনটাই লিখতে চেষ্টা করতাম। ‘শাড়ি নিয়ে লিখতে গিয়ে মেয়েদের মেধা-বুদ্ধির পরিচয় দেয়ার দরকার নেই তো, কিংবা এখানে মেয়েদের মেধা-বুদ্ধির প্রসঙ্গ আনারও কোনো প্রয়োজন নেই। সব কিছু এত পারসোনালি নেই কেন আমরা? এত নারীবাদী হওয়ারও কিছু নেই ভাই। সবার আগে মানুষ হই।’ তিনি আরও লিখেছেন, হে নারী, এমন করোনা লেখকের লেখা থেমে যাবে।

 

কবির কবিতা থমকে যাবে। তুমি রূপসী, তোমার দেহ পৃথিবীর সেরা পেইন্টিং তাই তোমার রূপের প্রশংসা হবেই। প্রশংসাই তো… প্রশংসার চেয়ে মধুর বাণী আর কি আছে বলো? লেখাটির জন্য আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদের সমালোচনা ‘বাড়াবাড়ি’ ঠেকছে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকের কাছেও। তিনি বলেন, লেখাটার বেশ কয়েকটি শব্দ চয়ন আমার কাছে একটু খারাপ লাগলেও আমি এভাবে সমালোচনার পক্ষে নই। কারণ হচ্ছে, উনার মতো এমন আলোকিত মানুষ আমাদের মধ্যে খুব কমই আছে। তাছাড়া শিল্প-সাহিত্যে একজন লেখকের নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে…বা কী লিখবেন, সে সম্পর্কে তার পূর্ণ স্বাধীন আছে। এত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন লিখেছেন, ‘দিনশেষে কি ঠিক হইলো..? শাড়ি কি আর পড়বো ..!’


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.