এইমাত্র পাওয়া

জাতীয় শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও স্বতন্ত্র শিক্ষা আদালত গঠন সময়ের দাবী

শিক্ষা আইন-স্বতন্ত্র সার্বভৌম স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘ ৫৪ বছর অতিক্রম করেছে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে নিজেদের সংস্কৃতি এবং জনগণের চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন আইন – বিধি প্রণীত হয়েছে। শিক্ষা মৌলিক অধিকার হবার সত্ত্বেও শিক্ষাধারার গাঠনিক কাঠামো অদ্যবদি অস্পষ্টই রয়েছে।

শিক্ষাকে আন্তর্জাতিকীকরনে, দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনে, উৎপাদনশীল বাজার ভিত্তিক শিক্ষা সময়ের চাহিদা। ইতোমধ্যে শিক্ষানীতি কেমন হওয়া উচিত সে মর্মে সরকার ভিত্তিক বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা কমিশন গঠন হয়েছে কিন্তু কোন কমিশন পূর্ণতায় আলোর মুখ দেখেনি।

শিক্ষা কমিশন গঠন হয় সব সময় ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের উপর। ফলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে গঠিত কমিশনের চিন্তা পরিকল্পনা অন্ধকারে চলে যায়। নতুন সরকার আসার মধ্যবর্তী সময়ে দিশাহারা অগোছালো শিক্ষা চলে,যার গন্তব্য ফলপ্রসূ হয়নি। প্রতিনিয়ত শিক্ষা ব্যবস্হা অবহেলিত হচ্ছে সেক্ষেত্রে শিক্ষাবিদগণ অসহায়ত্ববরন করে নিরবে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এবং অশ্রুশিক্ত নিঃস্বরণ করছে। সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো বাংলাদেশে কোন ” জাতীয় শিক্ষা আইন” নেই।

শিক্ষা আইন না থাকায় কাঠামোহীন অদূরদর্শি শিক্ষা জনগণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারছে না।জাতীয় শিক্ষা আইন না থাকায় শিক্ষাস্তর বিভাজন,সমন্বয়হীন একীভূত অধিদপ্তরে বিশৃঙ্খলা বিরাজমান। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আছে, কিন্তু মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষার কোন পৃথক অধিদপ্তর নেই অথচ স্তর অনুযায়ী সমস্যা ভিন্ন।

শিক্ষায় কোন আইন না থাকায় অধিদপ্তরের কর্তাদের অধিপত্যেই আইনে রূপ নিয়েছে। সময় সময় মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা অধিদপ্তর বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করে যার আইনগত কোন ভিত্তি নেই বরং সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে ফলে অনেক পরিপত্র আদালতের দরজায় যেতে হয়,অন্যায় পরিপত্রের কারণে কর্তা ব্যক্তিদের আদালতের নিকট ক্ষমা প্রার্থনায় নজির আছে।

এই অসঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্হা ধারা শুধুমাত্র শিক্ষা আইন না থাকায় কারণে হচ্ছে।জাতীয় শিক্ষা আইন কমিশন গঠন করে শিক্ষাকে কাঠামোর মধ্যে আনা গেলে শিক্ষা শৃঙ্খলা দ্রুতই আসবে। খুবই পরিতাপের বিষয় শিক্ষা ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা যখন সমস্যার কথা বলে তখন তার উপর ভিত্তি করে আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মিটিং করে সমাধানের নির্দেশনা দেয়া হয়, এই সমাধান কোন স্হায়ী ব্যবস্হা নয়। ইহা একপ্রকার আধিপত্য বিরাজ, ক্ষমতার অপব্যবহার।

সার্বজনিন শিক্ষা আইন থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন, পরিচালন,শিক্ষার্থীদের ন্যায্যতা,শিক্ষকদের প্রাপ্যতায় বিড়ম্বনা থাকবে না। ইচ্ছে মাপিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মসংস্হান সৃষ্টি করবে না বরং শিক্ষা কর্ম সংস্হানের পথ দেখাবে।

শিক্ষা আইন গঠন করে সেখানে সন্নিবেশিত করতে হবে – শিক্ষা স্তরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো, শিক্ষার্থীদের ব্যয়বিধি,শিক্ষকদের পৃথক বেতন বিধি,পরিচালন বিধি,কারিকুলাম বিধি, অর্জিত সনদের প্রয়োগ বিধি, শিক্ষা ক্ষেত্রে অপরাধ এবং শাস্তিবিধি ইত্যাদি। উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ স্বায়ত্তশাসন থাকায় আলাদা আলাদা আইনে পরিচালিত হয় সেক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতায় বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয় । সার্বজনীন শিক্ষা আইন প্রনয়নের ফলে অভিন্ন বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্হা গড়ে তোলা সহজতর হবে।

শিক্ষা আদালত-
সামাজিক পরিমন্ডলে বসবাসরত সভ্য মানুষের একে অপরের মধ্যে মত পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। চিন্তা – কর্মে ভিন্নতার কারণে অসহিষ্ণু হয়ে বিরোধ এবং বিবাদ সৃষ্টি হয়। বিরোধ এবং বিবাদ যখন সামাজিক ভাবে নিষ্পত্তি অসম্ভব হয় তখন মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। যুগে যুগে আদালতকে মানুষ নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ মনে করে। দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠী এলাকায় সংঘাত, সহিংসতার হার তুলনামূলক বেশি বিধায় আদালতের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রবণতা আধিক্য।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আদালতের উপর এতো বেশি চাপ ফলে অনেক সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ সময় লাগে। এমন অনেক নজির আছে যে ছোট সমস্যার আইনী সমাধানে ১০/২০ বছর সময় লাগে। সমস্যার ধরন অনুযায়ী পৃথক আদালত রয়েছে যেমন সিভিল কোর্ট,ক্রিমিনাল কোর্ট, নারী- শিশু কোর্ট, লেবার কোর্ট ইত্যাদি।

বর্তমান সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক নানাবিধ জটিলতা লক্ষ্যনীয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক কমিটি, ট্রাষ্টি বোর্ড,সনদের গ্রহনযোগ্যতা, প্রতিষ্ঠানের ভূমি সংক্রান্ত, পরীক্ষা – ফলাফল, সরকারি পরিপত্র ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় নিয়ে অসংখ্য মামলা রয়েছে। এই মামলা পরিচালনায় সাধারণ কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয় ফলে সংবেদনশীল এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘসূত্রীতায় ভেঙে পড়ে শিক্ষা শৃঙ্খলা। সময়ের দাবী পৃথক শিক্ষাবিষয়ক আদালত গঠন করা।

লেখা: শেখ মোহাঃ শাহিনুল আলম
অধ্যক্ষ, আলাউদ্দিন আহমেদ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কুষ্টিয়া।

 


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading