এইমাত্র পাওয়া

ইতিকাফ এক আলোকিত আত্মিক যাত্রা

মুহাম্মদ সরকার।।

ইতিকাফ হলো এমন এক বিশেষ ইবাদত, যা মুমিনদের পার্থিব জীবনের ক্লান্তি থেকে অবসর নিয়ে আল্লাহর নৈকট্যে আত্মনিবেশের সুযোগ করে দেয়। এই পবিত্র অনুশীলনের মাধ্যমে ইবাদতরত ব্যক্তি মন, বুদ্ধি ও হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে, আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণে সমর্পিত হন। ইতিকাফ শব্দটি আরবি ‘আকফ’ থেকে উদ্ভূত, যার মানে নিজেকে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে নিবিষ্ট করে রাখা। ইসলামি ঐতিহ্যে ইতিকাফ মানে হলো নির্দিষ্ট কিছু দিন। সাধারণত রমজানের শেষ দশকে মসজিদে অবস্থান করে দুনিয়াবি থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে কেবল ইবাদতে মনোনিবেশ করা। এই অনুশীলনের মূল উদ্দেশ্য হলোÑ১. আধ্যাত্মিক শুদ্ধি; নিজেকে পার্থিব জীবনের ব্যস্ততা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকা ২. আত্মবিশ্লেষণ; নিজের অভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যালোচনা করে আত্মিক উন্নতির পথ সুগম করা ৩. ধার্মিক অনুশীলন; কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া, তসবি ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।

ইতিকাফের আদর্শ ও চর্চার সূচনা রাসুল (সা.) থেকেই শুরু হয়েছে। নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ পালন করতেন এবং এই সুন্নত সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী ইসলামি মনীষীদের দ্বারা অবিচ্ছিন্নভাবে অনুসৃত হয়ে আসছে। হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি ইতিকাফের সুযোগ পায়, সে যেন ইতিকাফ করে’ (বুখারি : ১৯২৯)। এই প্রমাণ ও দলিলই ইতিকাফকে ইসলামি ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

দুনিয়ার ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতে ইচ্ছুক যেকোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইতিকাফ করতে পারেন। যারা পার্থিব জীবনের ব্যস্ততা থেকে কিছু দিন আলাদা হয়ে নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত করতে চান, তাদের জন্য এটি এক বিশেষ উপায়। সাধারণত মসজিদে বা নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ইতিকাফ করা হয়, যেখানে পরিবেশটি শান্ত ও মনোযোগী ইবাদতের জন্য উপযুক্ত। প্রায়ই রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত থাকে। ইতিকাফ পালনকালে মসজিদে অবস্থান করে কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া, তসবি ও তাজকির করা হয়; পার্থিব কাজকর্ম, আলোচনা বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থেকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের ঝামেলা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর নৈকট্যে মনোনিবেশ করা হয়।

ইতিকাফের আলাদা একটি আধ্যাত্মিক প্রভাব রয়েছে। ইতিকাফের মাধ্যমে মুমিনরা কেবল শারীরিক অবসর লাভ করেন না, বরং তা আত্মিক শুদ্ধির এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। পার্থিব লোভ ও উত্তেজনা থেকে নিজেকে পৃথক করে একজন মুসলিম তার ইবাদতের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগী হতে শিখেন, যার ফলে আত্মসংযম ও ধৈর্য বৃদ্ধি পায়। নিজেকে ও স্রষ্টার মাঝে সম্পর্কের গভীরতা অনুধাবন করতে ইতিকাফ সহায়ক এবং ইতিকাফ পালনকারী ব্যক্তির জীবনে যে আত্মিক পরিবর্তন আসে, তা চারপাশের মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও একাত্মতার বার্তা পৌঁছে দেয়।

ইতিকাফ শুধু এক নির্দিষ্ট ইবাদত নয়, বরং এটি এক আলোকিত আত্মিক যাত্রা। রাসুল (সা.)-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও প্রামাণ্য দলিল আমাদের মাঝে ইতিকাফ অনুশীলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে করে। পবিত্র রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ পালন করে একজন মুসলিম তার জীবনে এক নতুন মাত্রা আনতে পারেন, যা ব্যক্তিগত শুদ্ধি ও সামাজিক ঐক্যবর্ধনে অপরিসীম ভূমিকা রাখে।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading