এইমাত্র পাওয়া

৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা আটকে আছে

নিউজ ডেস্ক।। নামের বানানে ভুলের মতো বিভিন্ন ছোটখাটো ভুলে প্রায় ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা আটকে গেছে। তারা কবে এসব বেতন-ভাতা পাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসব ভুলের কারণে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) জন্য তথ্যভান্ডার হালনাগাদ না হওয়ায় এ জটিলতা হয়েছে বলে মাউশির সূত্র বলেছে। এজন্য উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রস্তুতির অভাব এবং ডাটাবেজে ভুল সংশোধন প্রক্রিয়ার ধীরগতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যানালগ পদ্ধতিতে ছাড় হতো। এই অর্থ তুলতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই বেতন-ভাতা পেতে দেরি হতো। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখও পেরিয়ে যেত।

এ পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের বেতন ইএফটিতে ছাড় হয়। গত ১ জানুয়ারি বেতন-ভাতা, অবসর ও কল্যাণ সুবিধা ইএফটির মাধ্যমে দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

মাউশি সূত্র বলছে, মাউশির অধীনে দেশের ১৯ হাজার ২৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ৯৮ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে সব তথ্য সঠিক থাকায় ইএফটিতে গত ১ জানুয়ারি বেতন পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৭ জন। দ্বিতীয় ধাপে কিছু সংশোধন শেষে বেতন পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৪৪৪ জন। তিন ধাপ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক ইএফটিতে বেতন

পেয়েছেন। অন্যদের মধ্যে ৩০ হাজারের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। আর ২৭ হাজারের তথ্য পাওয়া যায়নি। সেগুলো সংশোধন করার প্রক্রিয়া চলছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নামের বানান, নামের অমিল, জন্মতারিখ, ব্যাংক হিসাবে তথ্যের গরমিলসহ নানা কারণে ইএফটির তথ্যভান্ডার হালনাগাদ হচ্ছে না। তাই ইএফটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে সংশোধন করে বেতন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, আমার নামের আগে সবকিছুতে মোহাম্মদ লেখা। কিন্তু এমপিও শিটে মো. দেওয়া হয়েছে। এটি দিয়েছেন মাউশির কর্মকর্তারাই। সেজন্য আমি প্রথম দুই ধাপে না পেয়ে তৃতীয় ধাপে বেতন পেয়েছি।

গত বৃহস্পতিবার মাউশির ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান 

জানান, আগামী সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানদের প্যানেলে বিল সাবমিশন করতে দেওয়া হবে। এ ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের ডাটা ভেলিডিটেশন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এটি শেষ হলে জানুয়ারি মাসের বেতন যাবে। তবে যাদের তথ্যে ভুল আছে, তাদের দিতে সমস্যা হতে পারে।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. এহতেসাম উল হক 

বলেন, কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিছু চেক বাউন্স হয়েছিল। সেগুলো পরের লটে চলে যাবে। দ্রুতই শিক্ষকদের ইএফটিতে বেতন দেওয়ার কাজ চলছে।

এদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর আট বিভাগের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ডিসেম্বরের বেতন পরীক্ষামূলকভাবে এই ফেব্রুয়ারিতেই ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন 

জানান, সব প্রস্তুত না করে ইএফটিতে বেতন দেওয়া হবে না। ফেব্রুয়ারিতে আট বিভাগের আটটি মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার পাইলটিং করা হবে। পাইলটিংয়ের পর মে-জুন থেকে পর্যায়ক্রমে ইএফটিতে বেতন দেওয়া হবে।

বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ১৬৪টি। এগুলোর মধ্যে স্কুল ও কলেজ ২০ হাজার ৪৩৭টি, বাকিগুলো মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন সাড়ে ৫ লাখের মতো।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.