নিজস্ব প্রতিবেদক।। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ পরিস্থিতি ক্রমেই চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিগত সময়ের তুলনায় রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। খোদ পুলিশের পরিসংখ্যানেই এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কমে যাওয়ায় অপরাধীরা বেশি সক্রিয় হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাতের বেলায় বের হয়ে জীবনও যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক অপরাধের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, সবুজবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, রামপুরা ও বাড্ডা থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে।
পুলিশ বলছে, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে বা যখন কেউ হাতেনাতে ধরা পড়ে তখন তারা দ্রুত বিচার আইনে ওই ঘটনা রেকর্ড করে। তবে পাঁচজনের কম লোক ছিনতাই বা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকলে তখন পেনাল কোডের অধীনে মামলা হয়। এসব মামলাকে পুলিশ ‘ডাকাতি’ (দস্যুতা) মামলা বলে থাকে।
সম্প্রতি চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির মতো প্রকাশ্যে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি পুলিশের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাতেও উঠে আসে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কার্যক্রম বাড়িয়ে ছিনতাই শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সদর দপ্তরের ক্রাইম ডেটাবেজে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে সারা দেশে ১৫৯টি ‘ডাকাতি’র মামলা করা হয়েছিল, যা নভেম্বরে ছিল ১৩৩টি। ২০২৪ সালে এই মামলার সংখ্যা আগের বছরের ১ হাজার ২২৭টি থেকে বেড়ে ১ হাজার ৪১২টিতে দাঁড়িয়েছে।
২০২২ সালে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ১২৮টি, ২০২১ সালে ৯৭১টি ও ২০২০-এ ৯৭৮টি। এ ছাড়া ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরই ছিনতাই বেড়ে চলেছে। ২০১৯ সাল থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৪৭ হাজারের বেশি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ছিনতাইয়ের কারণে রাজধানীতে রাতে ও ভোরে চলাচল করতে মানুষ ভয় পাচ্ছেন। ঘটছে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা। পুলিশ ও ঢাকার আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাসে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় কত মামলা হয়েছে তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ নিয়ে যান না। ফলে শুধু মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে অপরাধের প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনের বিষয় নিয়ে আমরা সবসময়ই কাজ করি। সবসময় চেষ্টা থাকে এই অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার। এর মধ্যে আমরা ছিনতাই নিয়ে বেশি কাজ করছি। ছিনতাইয়ের ঘটনা যাতে আরও কমে যায় সে বিষয়ে সারা দেশের সব ইউনিটের দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
অপরাধ বাড়ছে, নাকি কমছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা পরিসংখ্যানভিত্তিক। ফলে পরিসংখ্যানই বলবে, বেড়েছে নাকি কমেছে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ শাখার এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীতে ৪৩২টি ছিনতাইয়ের জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই স্থানগুলোয় কমপক্ষে ৯৭৯ জন ছিনতাইকারী সক্রিয় আছে এবং তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন থানায় করা ফৌজদারি মামলার আসামি।
ডিএমপির মতিঝিল ও ওয়ারি বিভাগে কমপক্ষে ২১২ জন ছিনতাইকারী সক্রিয় আছে। মিরপুর ও তেজগাঁও বিভাগে প্রায় ৩৮৬ জন, রমনা ও লালবাগ বিভাগে ২১৭ জন এবং উত্তরা ও গুলশানে ১৫৪ জন ছিনতাইকারী সক্রিয় আছে।
৫ আগস্টে পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, অভিযান চলাকালে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৮৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ২৩, অক্টোবরে ৯১, নভেম্বরে ১৪৮ এবং ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ৫৬৪ জন।
ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মাদ তালেবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ডিএমপি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। ছিনতাই প্রতিরোধে রাত্রীকালীন পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারও করছে। লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারও হয়েছে। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষাবার্তা /এ/২৭/০১/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.