সিলেটঃ সিলেটে নতুন বইয়ের জন্য হাহাকার করছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা। এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। বছরের প্রথম মাস শেষ হওয়ার পথে। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা প্রায় দেড় মাসের ছুটি। এখনো একটি বইও হাতে পায়নি প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
বই না পাওয়ায় ক্লাসে তেমন একটা উপস্থিতিও নেই শিক্ষার্থীদের। এমনকি অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মিলছে না অনলাইন কপি। শহর এলাকায় অভিভাবকরা নিজ খরচে অনলাইন কপি প্রিন্ট করে তাদের সন্তানদের হাতে দিলেও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা।
গ্রামীণ এলাকার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে পুরোনো বই দিয়ে দু-একটা ক্লাস করানো হচ্ছে। তাও আবার এক বেঞ্চে একটি বই দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। পুরোনো বইয়ের সংকট থাকায় কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে দুই বেঞ্চের শিক্ষার্থীরা মিলে একটি মাত্র বই দেখার সুযোগ পাচ্ছে।
শহরের শিক্ষার্থীরা খুব একটা মাদ্রাসামুখী না হলেও বই না থাকায় স্কুল বিমুখ হচ্ছে তারা। তবে অনেকে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন কপি সংগ্রহ করে পড়াশুনা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে অভিভাবকদের। এতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের অভিভাবকরা।
সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমদ বলেন, বাচ্চারা পরীক্ষা দিয়ে আশায় থাকতো বছরের প্রথম দিন বই পাওয়া যাবে। কিন্তু এবার ছন্দপতনে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করা যায় সে দিক নিয়ে ভাবতে হবে।
রাজা ম্যানশনের কম্পিউটার ও স্টেশনারি ব্যবসায়ী সেলিম আহমদ বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনেক অভিভাবক এসে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বইয়ের প্রথম অধ্যায় প্রিন্ট করেছেন। এখনো প্রতিদিন অনেকে এসে প্রিন্ট করছেন। যাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে তারা সাদাকালো প্রিন্ট করছেন।
এদিকে সিলেটের কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলাসহ কয়েকটি এলাকার প্রাথমিকের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শুধু প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। সময়মতো পাঠ্যবই সরবরাহ করতে না পারায় এসব ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারে নেই বললেই চলে। আর যেসব শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যায় তাদেরকে পুরোনো বই দিয়ে পাঠদান করা হয়। ক্লাস শেষে আবার বই অফিসে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব শিক্ষকরা বলেন, পুরোনো বইও না থাকায় এক বেঞ্চের শিক্ষার্থীদের একটি বই দিয়ে পাঠ করানো হয়। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে দুই বেঞ্চের শিক্ষার্থীরা মিলে একটি বই পাঠ করে।
বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, বই না থাকায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। গড়ে ৪-৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে আসে। কিছু শিক্ষার্থী মাদরাসায় চলে যাওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মাদরাসাগুলোর ব্যাপক প্রচারণা অন্যতম একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রমি দেব বলেন, তিনটা বই পেয়েছি। বাংলা, গণিত ও ইংরেজি। বাকি বইগুলো না পাওয়ায় পড়ালেখায় অনেকটা পিছিয়ে পড়ব ৷ সামনে বিদ্যালয়ের বার্ষিক খেলাধুলা, এরপর আবার রমজান মাসের বন্ধ ৷ বলা হচ্ছে, আস্তে আস্তে সব বই দেওয়া হবে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইবা রহমান খান কোনো বই না পেয়ে অনেকটা কান্না জর্জরিত কণ্ঠে বলেন, সরকার তো পাল্টে গেছে, ড. ইউনূসের মনে হয় বই দিতে একটু দেরি হচ্ছে৷
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে পড়ার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে যে বই দেওয়া হয়েছে তা ভাগাভাগি করে পড়তে হবে। কবে বই আসবে-নির্দিষ্ট করে তাদের জানানো হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৩/০১/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.