এইমাত্র পাওয়া

শর্তের জালে আটকে গবেষণার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক।। গবেষণা যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির প্রধান উপায়। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা নীতিমালা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬ জন থিসিস করার সুযোগ পাবেন, যা শিক্ষার্থীদের হতাশ করছে। গত ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি স্মারকে থিসিস বণ্টন-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হয়, যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, বৈষম্যমূলক এ নীতিমালা তাদের গবেষণার সুযোগকে সীমিত করে দিচ্ছে এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাধাগ্রস্ত করছে।

ওই নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শুধু ন্যূনতম ৩.০০ সিজিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাই থিসিস করার সুযোগ পাবেন। কোনো বিভাগে ৮০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলে মাত্র ১০ শতাংশ এবং ৮০ জনের কম হলে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী থিসিস করতে পারবেন। অর্থাৎ, ৮০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে থিসিস পাবেন মাত্র ১৬ জন। আবার যদি কোনো বিভাগের আসন সংখ্যা ৩০ হয়, তবে ২০ শতাংশ হিসাবে মাত্র ছয় শিক্ষার্থী থিসিস করার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া, শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজার লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করবেন অথবা বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অ্যাকাডেমিক কমিটি কর্তৃক গৃহীত পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে। সুপারভাইজার হতে হলে পিএইচডি, এমফিল বা থিসিসসহ মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে। একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ তিনজন শিক্ষার্থীর সুপারভাইজার হতে পারবেন।

শিক্ষার্থীদের থিসিস নিতে এসব শর্ত জারির বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন ক্ষোভ জানিয়ে

বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল শক্তি গবেষণা। কিন্তু যেখানে বিশ্ব উচ্চ গবেষণার দিকে এগোচ্ছে, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নতুন শর্ত দিয়ে গবেষণাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন নাওয়ার জয়া বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। থিসিসের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার প্রতিফলন না থাকলে গবেষণার মান কমে যাবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবেষণায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে। ২০২২ সালে স্পেনের সিমাগো ইনস্টিটিউশন র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রসায়ন গবেষণায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০২২ সালের নভেম্বরে প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি সমস্যার সমাধান পদ্ধতি আবিষ্কার করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।

আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৩ সালের তালিকায় স্থান পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫ জন গবেষক। এ ছাড়া, গবেষণা খাতে বাজেটও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এমন একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের জন্য জবি শিক্ষার্থীরা আশা হারাচ্ছেন গবেষণায়।

গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক ইমরানুল হক বলেন, আমরা গবেষণার সুযোগকে সীমিত করতে চাই না। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনা করে নীতিমালার পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, এই থিসিসের বিষয়ে আমাদের একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা একটা রিপোর্ট দেবে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী শিগগিরই নতুন সিদ্ধান্ত আসবে। আশা করি ভালো সিদ্ধান্তই আসবে।

শিক্ষাবার্তা /এ/২৩/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.