জয়শ্রী ভাদুড়ী।। থমকে আছে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অবৈধ নিবন্ধনহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান। চিকিৎসা অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হলে তখন নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভিন্ন মৌসুমে বারবার হাঁকডাক দিয়ে অভিযান শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ঘোষণা ছাড়াই আবার থেমে যায়।
গত বছর রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল এ হাসপাতাল। এর কিছুদিন পরই মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে আরেক শিশু আহনাফ তাহমিদের মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। এবারও উঠে আসে সেই একই ঘটনা, লাইসেন্স ছিল না এই হাসপাতালটিরও। এর পরেই অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
২০২০ সালে এমন অভিযানে নেমেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু নানামুখী চাপে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২২ সালের ২৫ মে আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ওই সময় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাইসেন্স নবায়নের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয় কিছু প্রতিষ্ঠানকে। তবে পরবর্তীতে সেই অভিযানের গতি কমে এলে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়ার সুযোগ নিয়ে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্ম্য বাড়লে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেটিও ঝিমিয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৮৪৫টি। এর মধ্যে হাসপাতাল ৫ হাজার ৫৬০টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১১ হাজার ৬২টি এবং ব্লাড ব্যাংক ২২৩টি।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে নতুন অনুমোদন পেয়েছে ৩৭৯টি, লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ১ হাজার ৫৯৩টির। চট্টগ্রামে অনুমোদন পেয়েছে ১৬০টি, লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৯২৫টির। সিলেটে অনুমোদন পেয়েছে ২৩টি, লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ২২৫টি। ময়মনসিংহে অনুমোদন পেয়েছে ৪৩টি, লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ১১৫টির।
খুলনায় অনুমোদন পেয়েছে ১০১টি, লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৩৮৩টির। বরিশালে অনুমোদন পেয়েছে ৬৭টি, লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৩৩৯টির। রংপুরে অনুমোদন পেয়েছে ৮০টি, লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ১১৮টির। রাজশাহীতে অনুমোদন হয়েছে ১২৪টি, লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ২২৮টির। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেন, কোথাও কোনো দুর্ঘটনা কিংবা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠলেই শুরু হয় অভিযান। কিছুদিন পর আবার এমনিতেই সবকিছু থেমে যায়।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংক মনিটরিংয়ে যুগোপযোগী আইনের প্রয়োজন। ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ দিয়ে চলছে সারা দেশের ১৬ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মনিটরিং। ২০১৬ সাল থেকে এ আইনকে যুগোপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষা আইনের খসড়ায় এ বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই খসড়া বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন টেবিলে ঘুরছে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার এ অব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগী ও স্বজনরা। প্রাণহানি, অঙ্গহানি, শারীরিক-মানসিক ট্রমার সঙ্গে আর্থিক ক্ষতির শিকারও হতে হচ্ছে। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ’
সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা বছর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঘোষণা দিয়ে কাজটি পরিচালনা করা হচ্ছে না বলে অনেক সময় ধীরগতি মনে হতে পারে।
কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই মনিটরিং প্রক্রিয়া সবসময় চলমান থাকে। দেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিককে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ’
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.