নিজস্ব প্রতিবেদক।। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অমর একুশে বইমেলায় অতিরিক্ত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ থাকার কারণে এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পাচ্ছে না এক ডজনেরও বেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
অন্যপ্রকাশ, আগামীসহ তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নের আকার ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটি।
এছাড়া বেশ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন বাতিল করে তাদের ৩ ও ৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেলা পরিচালনা কমিটি।
‘জার্নিম্যান’ গত মেলায়ও প্রতিষ্ঠানটি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছিল, কিন্তু এবার মেলায় স্টলও বরাদ্দ পাচ্ছে না প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার বইমেলা পরিচালনা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হওয়ার বিষয়টি বলেছেন সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন।
সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সূচিপত্র প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী সাঈদ বারী বলেন, “প্রকাশকদের পক্ষ থেকে দাবি ছিল, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময় প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নেওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে যেন এবারের মেলায় স্টল বরাদ্দ না দেওয়া হয়।
“সেই দাবির ফলশ্রুতিতেই এবার ‘জার্নিম্যান’ প্রকাশনীকে মেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। আর কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গত মেলায়ও রাজনৈতিক প্রভাবে প্যাভিলিয়ন নিয়েছিল, তাদেরকে এবার প্যাভিলিয়ন দেওয়া হচ্ছে না। তাদের ৩ ও ৪ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।”
মেলা কমিটির এই সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি এবং অন্যপ্রকাশ এর প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম।
ওসমান গণি বলেন, “প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কিছু প্রকাশকের উস্কানিতে বইমেলা কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক এবং নিন্দনীয় একটি কাজের উদাহারণ হল।”
প্রকাশকদের রাজনৈতিক বিবেচনায় না দেখার কথাও বলেন ওসমান গণি। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের দুজন উপদেষ্টার বই আছে আমার প্রকাশনীতে। ফরহাদ মজহার, হুমায়ূন আজাদের বই প্রকাশ করেছি। বইয়ের মান দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। যারা এসব উস্কানি দিয়ে করছে, তাদের প্রকাশনীর বইয়ের তালিকা আর আমার প্রকাশনীর বইয়ের তালিকা দেখেন।”
মাজহারুল ইসলাম বলেন, “শুধু বলবো ‘দুঃখজনক’, আর কী-বা বলার আছে। একটি খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি হল।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে, যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জুলাইয়ের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামার মধ্য দিয়ে।
ক্ষমতার পালাবদলের নতুন প্রেক্ষাপটে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপি বইমেলা শুরু হবে।
বিগত বছরের মতোই এবারের মেলাও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
প্যাভিলিয়ন বাতিল হল যাদের
সভায় উপস্থিত থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, তাম্রলিপি গত মেলায় ২৪/২৪ সাইজের প্যাভিলিয়ন পেয়েছিল, এবার তাদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তিন ইউনিটের স্টল।
এছাড়া চারুলিপি, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, বিশ্বসাহিত্য ভবন এবং শব্দশৈলীকেও প্যাভিলিয়ন বাতিল করে তিন ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
গতবারের মেলায় ২৪/২৪ সাইজের প্যাভিলিয়ন পেয়েছিল- পাঠক সমাবেশ, পুঁথিনিলয়, মিজান পাবলিশার্স, অন্বেষা প্রকাশন, অনিন্দ্য প্রকাশ, কাকলী প্রকাশনী ও সময় প্রকাশন। তাদের এবার দেওয়া হচ্ছে চার ইউনিটের স্টল।
আর ২০/২০ সাইজের প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছিল নালন্দা ও পার্ল পাবলিকেশন্স। এবার তারা পাচ্ছে চার ইউনিটের স্টল।
আবিস্কার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হাসান বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর থেকেই দালাল প্রকাশকদের কালো তালিকা করে এদের বয়কটের জন্য সোচ্চার আন্দোলন গড়ে তোলেন প্রকাশকরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সভায় মেলা পরিচালনা কমিটি দালাল প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন বাতিল করেছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বইমেলা ২০২৫ এর পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সরকার আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলায় স্টল বরাদ্দের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য বইমেলা পরিচালনা কমিটি একটি উপকমিটি গঠন করেছিল। সেই উপকমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্টল বরাদ্দ বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
“যেখানে কিছু প্যাভিলিয়নের বরাদ্দ বাতিল করে তাদের তিন ও চার ইউনিটের স্টল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা শিগগিরই বরাদ্দপ্রাপ্ত স্টলের নাম প্রকাশ করব।”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সরকার আমিন, কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান, প্রকাশক প্রতিনিধি সাঈদ বারী, মো. গফুর হোসেন, আবুল বাশার ফিরোজ, আরিফুর রহমান নাইম, মাহবুব রাহমান, মো. জহির দীপ্তি।
শিক্ষাবার্তা /এ/১০/০১/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.