এইমাত্র পাওয়া

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ২৮ শতাংশ বেকার

নিউজ ডেস্ক।। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই কম আয়ের চাকরিতে নিয়োজিত। নারী এবং গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের তৃতীয় দিনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিআইডিএসের রিসার্চ পরিচালক এসএম জুলফিকার আলী কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্ব নিয়ে করা এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কলেজগুলো মধ্যে ৬০৮টি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন, এর মধ্যে বিআইডিএস ৬১টি কলেজ বেছে নিয়েছে। এই গবেষণায় ১ হাজার ৩৪০ জন পাস করা শিক্ষার্থী, ৬৭০ জন অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ৬১ জন কলেজ অধ্যক্ষ এবং ১০০ জন চাকরিদাতা অংশগ্রহণ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্নাতক সম্পন্ন হয় ব্যবসায় শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক বিষয়ের ওপর, যেখানে বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের হার অনেক কম (স্নাতকে ৩.৮২ শতাংশ, স্নাতকোত্তরে ৩.১০ শতাংশ)। পাশাপাশি প্রায় ৪২ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বেতনভোগী চাকরিতে এবং ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। বেকারদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি এবং গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হারও বেশি। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার তুলনামূলক বেশি, তবে কারিগরি ও দাখিল শিক্ষায় এই হার কম।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশ শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত এবং অনেকেই অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসারের পদে চাকরি করছেন। সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা ৪৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর। যেখানে অধিকাংশের লক্ষ্য সরকারি চাকরিতে যোগদান করা।

এই গবেষণায় উঠে এসেছে কলেজগুলোর নানা সমস্যা, যার মধ্যে রয়েছে কলেজগুলোর মান কম, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও ইনসেনটিভের অভাব এবং চাকরির বাজারমুখী শিক্ষার অভাব। এদিকে সম্মেলনে ‘আউট অব পকেট কস্ট অব কিডনি ডায়ালাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা ফেলো ড. আবদুর রাজ্জাক সরকার।

গবেষণাপত্র উপস্থাপনকালে তিনি জানান, কিডনি রোগে আক্রান্ত একজন রোগীর ডায়ালাইসিসে প্রতি মাসে পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সর্বোচ্চ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

তবে সর্বনিম্ন ব্যয় হয় ৬ হাজার ৬৯০ টাকা। এ ছাড়া অসংক্রামক রোগের কারণে সব শ্রেণির মানুষের পকেট থেকে গড়ে খরচ হয় মোট আয়ের ৮৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের পকেট থেকে যে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে এর মধ্যে শুধু ডায়ালাইসিস ফি দিতে মাসে খরচ হয় সর্বনিম্ন ৪৫৮ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা। এ রকম প্রায় ছয় ধরনের সরাসরি মেডিকেল চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ হয় ৪ হাজার ২৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ২ লাখ ২ হাজার ৮০০ টাকা। এদিকে কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস করাতে সরাসরি মেডিকেল নয় এমন ছয় ধরনের নন-মেডিকেল খরচ হয় শূন্য থেকে ৯২ হাজার ৬০০ টাকা।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ডায়ালাইসিসের মধ্যে মোট মাসিক যে খরচ হয় এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ ডায়ালাইসিস ফি দিতে হয়। এ ছাড়া কনসালটেশন ফি ২ দশমিক ৪১ শতাংশ, ওষুধ কিনতে ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ১০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আরও আছে বেড ফি ২ দশমিক ৪৯, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট খরচ ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে খরচ হয় ১ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর নন-মেডিকেল খরচের মধ্যে ডায়ালাইসিসে খরচ হয় যাতায়াতে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, খাদ্যে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং ঘুষ দিতে যায় দশমিক ১২ শতাংশ।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ওয়েলথ ইনডেক্স অনুযায়ী অসংক্রামক স্বাস্থ্য ব্যয়ের মধ্যে কিডনি ডায়ালাইসিসে একজন রোগীর পকেট থেকে মোট আয়ের ২৫ শতাংশ খরচ হয়। এ ছাড়া মোট খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ের ৪০ শতাংশই যায় নিজের পকেট থেকে। এ ক্ষেত্রে অতি দরিদ্রদের পকেট থেকে খরচ হয় মোট আয়ের ৯২ দশমিক ৭১ শতাংশ, গরিবদের ৮৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ, মধ্য আয়ের মানুষের ৯২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ধনীদের ৮৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং অতি ধনীদের ৮৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ খরচ হয়।

গবেষণাপত্র উপস্থাপনকালে বলা হয়, কিডনি ডায়ালাইসিস হলো একটি প্রসেস বা প্রক্রিয়া। মানুষের শরীরে যখন কিডনি কাজ করে না, তখন অনেক ধরনের বর্জ্য পদার্থ জমে যায়। সে জন্য কিডনির বিকল্প হিসেবে বর্জ্যগুলো পরিশোধিত করার যে প্রক্রিয়া সেটিকে ডায়ালাইসিস বলে। অর্থাৎ কিডনির বিকল্প হচ্ছে ডায়ালাইসিস।

আরও বলা হয়েছে, কিডনি নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সবসময় ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে যার নিজস্ব চিকিৎসা এবং সংশ্লিষ্ট আলাদা খরচ থাকে। এগুলো মেটানো প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া কারও মানসিক স্বাস্থ্য এবং এ সংক্রান্ত কাউন্সেলিং দরকার হয়। এটি করাতে আলাদাভাবে অনেক টাকা লাগে। এ ক্ষেত্রে শুধু ধনীরাই এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.