রংপুরঃ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গোলাম রব্বানী নামে ওই প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তার বরাবর নিয়োগপত্র পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গোলাম রব্বানীকে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে তাকে যোগদান করতে না দিয়ে একই নামে আওয়ামী পন্থী আরেক গোলাম রব্বানীকে নিয়োগ দেয় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ১৫ বছর আগে ইতিহাস বিভাগে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাওয়া রাজশাহীর গোলাম রব্বানী।
সূক্ষ্ম এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়ার সময়ে। আবেদন পত্র এবং সার্বিক বিষয়ে তদন্তের কথা জানিয়েছে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হন রাজশাহীর বাগমারার মো. গোলাম রব্বানী। নিয়োগপত্র সিন্ডিকেটে তার নাম থাকলেও তাকে বাদ দিয়ে নামের মিল থাকায় জালিয়াতির মাধ্যমে ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মো. গোলাম রব্বানী।
নিয়োগ পাওয়া রব্বানী আওয়ামী পন্থী শিক্ষক সংগঠন নীল দলের অন্যতম সদস্য। সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ পেলে ব্যাপক হৈচৈ পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
জানা গেছে, ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হন রাজশাহীর গোলাম রব্বানী।
বাছাই বোর্ডের সুপারিশে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর একাদশ তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন করা হয়।
একাদশ তম সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচী-২ এ দেখা যায়, ইতিহাস বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে নিয়োগের নিমিত্তে বাছাই বোর্ডের সুপারিশ অনুমোদনের জন্য রাখা হয় এবং তা অনুমোদন করা হয়।
সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচী -২ এর সিদ্ধান্ত-২ এর ক্রমিক নম্বর ৪ এ ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে মো. গোলাম রব্বানী ও আরা তানজিয়া’র নাম ও অপেক্ষমাণ তালিকায় মো. মনিরুজ্জামানের নাম পাওয়া যায়। একাদশতম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মো. গোলাম রব্বানী, গ্রাম. বালিয়াডাঙ্গা, পো. নাসিরগজ, থানা বাগমার, জেলা. রাজশাহীকে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়।
নিয়োগপত্রে বলা হয়, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত ইতিহাস বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সুপারিশ এবং ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের একাদম সভার অনুমোদনক্রমে আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তাবলীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর ইতিহাস বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
এতে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখের মধ্যে তাকে যোগদান করতে বলা হয়। এবং যোগদানের তারিখ হতে এই নিয়োগ কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, নিয়োগপত্রের শর্ত অনুযায়ী রাজশাহীর বাঘমারার মো. গোলাম রব্বানী ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসের ২ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের নিকট প্রভাষক পদের যোগদানপত্র জমা দেন। কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন যোগদানপত্র গ্রহণ না করে যোগদানপত্র পরে গ্রহণের বিষয়টি পরে জানানো হবে বলে জানানো হয় তাকে। বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়।
অভিযোগ উঠেছে, সূক্ষ্ম জালিয়াতির আশ্রয় নিতেই সিন্ডিকেট কপিতে শুধু গোলাম রব্বানী লেখা হয়েছে, তাতে বাবার নাম উল্লেখ নেই। এ ছাড়াও রাজশাহীর গোলাম রব্বানী যোগদান না করলে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা মনিরুজ্জামান যোগদান করার কথা। তিনিও যোগদান করেছেন কিন্তু ঠাকুরগাঁও এর গোলাম রব্বানী কীভাবে নিয়োগ পেলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়া ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতাদের যোগসাজশে নামের মিল থাকায় অপর প্রার্থী মো. গোলাম রব্বানী গ্রাম- পূর্ব শুখানপুকুরী, ডাকঘর। ডি হাট-৫১০০, ঠাকুরগাঁও সদর, জেলা- ঠাকুরগাঁও ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান নেন। শুধু নামের মিল থাকার কারণে প্রকৃত চাকরি প্রার্থী রাজশাহীর গোলাম রব্বানীকে বঞ্চিত করা হয়।
এদিকে, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের ফলে প্রকৃত নিয়োগ পাওয়া রাজশাহীর গোলাম রব্বানী তার চাকরি ফেরত পেতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছেন। একই সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি পাওয়া ঠাকুরগাঁও এর গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
রাজশাহীর গোলাম রব্বানী জানান, পরীক্ষায় প্রথম হন তিনি। কর্তৃপক্ষ থেকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। আমি নিয়োগ পেয়ে যোগদান করতে যাই এবং আবেদনপত্র দেই। কিন্তু আমাকে যোগদান না করিয়ে বলে পরে যোগদান করানো হবে। এরপর আমি চারদিনের ছুটিতে বাড়িতে আসি এবং পাঁচ তারিখে গেলে আমাকে জানানো হয়, ওই নিয়োগপত্রে ঠাকুরগাঁও-এর একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমি প্রতিবাদ জানাই।
চাকরিরত গোলাম রব্বানীর ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোস্তফা কামাল জানান, আমরা একটা লিখিত আবেদন পেয়েছি। তাতে দেখা গেছে গোলাম রব্বানী নামে একজনের চাকরি হয়েছে কিন্তু তাকে যোগদান না করিয়ে অন্য একজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। আসলে ঘটনা যদি সঠিক হয় তাহলে এটা হতে পারে না। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৬/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.