নিজস্ব প্রতিবেদক।। চাকরিজীবন শেষে অবসর ভাতার টাকা না পেয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের। বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে এ অর্থের জন্য।
কারও কারও অপেক্ষা চার বছরের বেশি। চাকরিজীবন শেষে বার্ধক্যে এসে টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না অনেক শিক্ষক-কর্মচারী। চাকরিরত অবস্থায় মারা গেছেন অনেক শিক্ষক। মৃতের পরিবারের সদস্যরা এ টাকার আশায় থাকলেও তাঁদেরও অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বাগমারা দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মো. আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর অবসরের টাকা পেতে কল্যাণ ট্রাস্ট (এম-৩৩৭১৭৫৭০২) ও অবসর বোর্ডে (এম-২০২৪০৩২৮১২০৩১১) আবেদন করেছেন স্ত্রী মোছা. মেরিনা খাতুন। স্বামীর মৃত্যুর কারণে পরিবার নিয়ে অর্থকষ্টে রয়েছেন তিনি। কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকলেও এ টাকা পাওয়ার কোনো খবর নেই।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন মেরিনা খাতুন। স্বামীর কল্যাণ ও অবসরের টাকা না পাওয়ায় প্রতি মাসে বাড়ছে তাঁর ব্যাংক ঋণের সুদ। তথ্যমতে, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা চাকরিকালীন তাঁদের বেতনের ৬ শতাংশ অর্থ অবসর সুবিধা বোর্ডের ফান্ডে ও ৪ শতাংশ কল্যাণ ট্রাস্টে জমা দেন। জমাকৃত এ অর্থের সঙ্গে একটি অংশ যোগ করে চাকরি শেষে এ শিক্ষক-কর্মচারীদের দিয়ে থাকে সরকার।
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন জমা হয়। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে মাসে প্রয়োজন হয় ১১৫ কোটি টাকা। কিন্তু শিক্ষকদের এমপিও থেকে কেটে নেওয়া ৬ শতাংশ টাকায় এ খাতে মাসে জমা হয় মাত্র ৭০ কোটি। আর বোর্ডের এফডিআর থেকে পাওয়া যায় আরও ৩ কোটি টাকা। সব মিলে মাসে প্রায় ৪২ কোটি টাকা ঘাটতি থেকে যায়। বছর শেষে এ ঘাটতি দাঁড়ায় ৫০৪ কোটি টাকায়।
সূত্র জানান, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদনকৃত শিক্ষক-কর্মচারীর অডিট নিষ্পত্তি করা হয়েছে অবসর সুবিধা বোর্ডে। এর মধ্যে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত জমাকৃত আবেদনের অবসর ভাতার অর্থ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ভাতা প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে সরকারের প্রয়োজন হবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে ৩৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন নিষ্পত্তি করে টাকা ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছেন। কল্যাণ ট্রাস্টে প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিক্ষক-কর্মচারী সুবিধা পেতে আবেদন করেন। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রতি মাসে প্রয়োজন হয় ৭০ কোটি টাকা। অথচ শিক্ষকদের এমপিওর ৪ শতাংশ টাকা, জমা এফডিআর থেকে মোট আদায় হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ প্রতি মাসেই ২০ কোটি টাকা ঘাটতি থেকে যায়। শিক্ষকদের জমাকৃত অর্থের তুলনায় অবসরের পর অনেক বেশি টাকা দেওয়া এবং ফান্ডে অর্থ সংকটের কারণেই বিলম্ব হচ্ছে ফাইল নিষ্পত্তিতে।
কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ড তহবিলে ঘাটতির কারণেই বছরের পর বছর অর্থ সংকটে থাকতে হচ্ছে অবসরে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. আবুল বাশার প্রতিবেদককে বলেন, ‘অবসরের পর শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অর্থাভাবে অনেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারেন না।
কিন্তু ফান্ডে প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় সময়মতো আমরা তাঁদের সুবিধার টাকা দিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে সরকার যদি এককালীন সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেয় তবে এ সমস্যা সমাধ্যান করা সম্ভব হবে।’ তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতি বছর বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
শিক্ষাবার্তা /এ/২১/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.