এইমাত্র পাওয়া

প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রয়োজন!

ঢাকাঃ প্রাথমিক শিক্ষকদের বর্তমানে একাডেমিক, দাপ্তরিক এবং সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার যে কাজ তা সঠিকভাবে প্রতিপালন করলে অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট যেমন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং টেকনিক্যাল বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষকদের অধিক পরিশ্রম করতে হয়। আমার ২৩ বছরের সহকারী শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় দেখেছি একজন প্রধান শিক্ষককে তার বিদ্যালয় মাথায় নিয়ে চলতে হয়। বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে বা তিনি ছুটি নিলেও মাথা থেকে তার বিদ্যালয় নামাতে পারেন না।

আমার জীবনে কোনো প্রধান শিক্ষককে পদোন্নতি পেতে দেখিনি। কী তাদের অপরাধ? ২০১০ সালের আগে অল্প কিছু সহকারী শিক্ষককে পদোন্নতি পেতে দেখেছি তাও আবার স্ববেতনে। কী অদ্ভুত নিয়ম! ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে তিনটি টাইম স্কেলের পরিবর্তে দুটি উচ্চতর গ্রেড প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু সেই উচ্চতর গ্রেড শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে না। উচ্চতর গ্রেড আর উন্নীত গ্রেড যে এক নয়, সেটা অর্থ বিভাগের কিছু কর্মকর্তা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে উচ্চতর গ্রেডপ্রাপ্তির পথ রোধে আদেশ জারি করেন ০৯/০৮/২০২১ তারিখে।

এই আদেশ স্থগিত বা বাতিল করতে আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? ইতিপূর্বে সরকার সময়ে সময়ে উন্নীত স্কেল ঘোষণা করেছে, কিন্তু টাইম স্কেলের ফিক্সেশনে কোনো সমস্যা হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রয়োজনমতো সুযোগ- সুবিধা বাড়িয়ে এবং সৃষ্ট অসুবিধা বা জটিলতা নিরসন করে প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করবে আমাদের মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর-এটাই তো স্বাভাবিক। কোনো সিদ্ধান্ত বা মামলার রায় শিক্ষকদের বিপক্ষে গেলে সিদ্ধান্ত বা রায়ের আলোকে আদেশ জারি করতে মোটেই বিলম্ব হয় না।

আর শিক্ষকদের পক্ষে গেলে আদেশ জারি করতে কালক্ষেপণ করা হয়। অথবা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ব্যাপারে তৎপরতারও কমতি নেই। এখনো অনেক রায় হয়ে আছে অথচ রায়ের আলোকে আদেশ জারি করা হচ্ছে না। সর্বোপরি প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্র ভালো নেই। আমরা বক্তৃতায় কিংবা কাগজে-কলমে যাই বলি না কেন, বাস্তবে এই ডিপার্টমেন্টে উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্র এখনো উপেক্ষিত।

কাজেই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে বিদ্যমান কাঠামো ও বিধি-বিধানসমূহ। বিদ্যমান ২০ গ্রেডের বেতন কাঠামো ও প্রচলিত বিধি-বিধানে এই পাহাড়সম সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ও বিশেষ আর্থিক বিধান প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে গ্রেড থাকবে ১০টি। সহকারী শিক্ষকদের প্রারম্ভিক নিয়োগ ১০ নম্বর গ্রেডে। তারপর প্রশিক্ষণ, উচ্চতর গ্রেড, পারদর্শিতা মূল্যায়ন গ্রেড এবং পদোন্নতি পেয়ে ১ নম্বর গ্রেডে পৌঁছানোর সুযোগ থাকবে।

বর্তমান বিদ্যমান পদ কাঠামোর পরিবর্তন জরুরি। ৩০/৪০ বছর শিক্ষকতা করেও একজন পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক হতে পারেন না। সহকারী শিক্ষক হিসেবেই অবসর গ্রহণ করতে হয়। পদ কাঠামো পুনর্বিন্যাস করে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে ‘সিনিয়র শিক্ষক’ ও ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ দুটি নতুন পদ সৃষ্টি করা উচিত। আগের মতো টাইমস্কেল প্রথা প্রবর্তন করতে হবে। বর্তমানে সকল শিক্ষকের জন্য একই সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান।

অর্থাৎ যিনি বিদ্যালয় পরিবেশ উন্নয়ন, নিজের পেশাগত দক্ষতা প্রয়োগ করে যথাযথ শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়ন ও কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একজন দক্ষ নিবেদিতপ্রাণ আদর্শ শিক্ষক। অন্যদিকে আমি অলস, ফাঁকিবাজ গতানুগতিক ধারার দায়সারাভাবে শ্রেণি পাঠদান করে কোনো রকম দিনাতিপাত করছি। এক্ষেত্রে তার আর আমার আর্থিক সুবিধা সমান! শিক্ষকদের পারদর্শিতা মূল্যায়ন করে বিশেষ আর্থিক সুবিধার বিধান চালু করা যেতে পারে। হতে পারে বিশেষ গ্রেড/স্কেল অথবা বিশেষ ইনক্রিমেন্ট।

তাহলে দক্ষ নিবেদিতপ্রাণ আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে তৈরি করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। আসলে পাঠদান প্রক্রিয়াটি জটিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের বেলায় আরো স্পর্শকাতর। এই শিশুদের পাঠদানকালে কোনো চাপ বা আর্থিক সংকটের চিন্তা মাথায় রেখে সুষ্ঠু পাঠদান সম্ভব নয়। অনুশাসনের ক্ষেত্রে ডগলাস ম্যাকগ্রেগরের শুধু X বা শুধু Y থিউরি প্রয়োগ করলে হবে না, X, Y এবং Z থিউরি প্রয়োগ করতে হবে।

লেখক মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ: সহকারী শিক্ষক, আমবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেলান্দহ, জামালপুর

মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০২/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.