নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের উজানী বি কে বি ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের সদ্য বিদায়ী আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় আর্থিক দুর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী সরকারের আমলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়মন্ত্রী মুহ: ফারুক খানের ছাত্রছায়ায় নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, ছাত্রাবাস ও কলেজ ভবন নির্মাণ থেকে কয়েক কোটি টাকা অবৈধ আয়সহ তিনি গড়েছেন অঢেল সম্পত্তি, একাধিক বাড়ি ও নগদ অর্থ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজানী বি কে বি ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজ ১৯৯৩ সালে এলাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য উজানী নামক স্থানে উজানী বি, কে, বি ইউনিয়ন মহাবিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫-৯৬ ইং শিক্ষাবর্ষ থেকে বোর্ড কর্তৃক ছাত্র/ছাত্রী ভর্তির অনুমতি প্রদান করা হয় এবং ০৬.১০.১৯৯৮ ইং তারিখে প্রথম সাময়িক স্বীকৃতি পায় কলেজটি এবং। ১৫.০১.১৯৯৮ ইং সনে এমপিওভুক্ত হয়। কলেজটির অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ কলেজটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন ৩০ মার্চ ১৯৯৫ সালে। তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সেই কলেজটিতে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন এবং প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি এমপিওভুক্ত হন। ১৯৯৫ সালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী নূন্যতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ্য থাকলেও তার ঝুলিতে ছিল না কোন অভিজ্ঞতা। মাত্র ২৮ বছর বয়স থেকেই অধ্যক্ষ পদে আসীন রয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৯ বছর ধরে অধ্যক্ষ পদে থেকে ও টানা ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের সাবেক বিমানমন্ত্রীর ছত্র ছায়ায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষক নিয়োগ কলেজের ছাত্রাবাস নির্মাণ, কলেজ ভবন নির্মাণ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক খাত থেকে সড়িয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। সর্বশেষ কলেজটির ডিগ্রি শাখা চলতি বছরের জানুয়ারিতে এমপিওভুক্ত হলে ডিগ্রি শাখার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে শিক্ষকদের নিকট থেকে অন্তত ৪৫ লাখ টাকা নিয়েছেন তাদের এমপিওভুক্ত করার কথা বলে। নিয়োগের সময় অন্তত ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে এসব শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও কলেজ ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মানের ঠিকাদারের কাছ থেকে ৭৫ লক টাকা হাতিয়ে নেন অধ্যক্ষ কালাম।
সর্বশেষ কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অপসারণ করার আগ পর্যন্ত কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন সদ্য বিদায়ী আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহ: ফারুক খানের মেয়ে কানতারা খান। কানতারা খানের একছত্র প্রভাবে কলেজটির অনিয়ম নিয়ে কথা বলার সাহস করেনি কেউ। এসব অবৈধ লেনদেনের কাজে অধ্যক্ষকে সরাসরি সাহায্য করেছেন কলেজের শিক্ষক মোঃ আরিফুজ্জামান ও অধ্যক্ষের স্ত্রী যিনি অত্র কলেজের একজন শিক্ষিকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী ছত্র ছায়ায় কলেজের দুর্নীতি করে কামানো টাকায় ফরিদপুরে সদরে একাধিক বাড়ী ও জমি ক্রয় করেছেন এই অধ্যক্ষ। এছাড়াও ব্যাংকে রয়েছে তার কয়েক কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, অধ্যক্ষ কর্তৃক বিগত ৩০ বছর যাবৎ কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, ভর্তি বানিজ, কলেজের ছাত্রাবাস নির্মাণ, কলেজ ভবন নির্মাণ এবং অন্যান্য ডেভেলপমেন্ট খাত, শিক্ষকদের বেতন করিয়ে দেওয়ার নাম করে নজিরবিহীন দুর্নীতি চলছে, এখনও মহোৎসব চলছে। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলে তার উপর চলে নির্মম নির্যাতন।কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক হিন্দু হওয়ায় সে আরও বেপরওয়া।
এলাকাবাসী জানায়, স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ফারুখ খান ও তার পরিবার পালিয়ে গেলেও এদের ছত্রছায়ায় থাকা অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এখনও স্বপদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সরকার পতন হলেও তার দুর্নীতি থামানো যাচ্ছে না। শিক্ষা প্রশাসনের উচিত তাকে তার এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। না হলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা পরিবেশ ফিরবে না। বিগত কয়েকবছর পড়াশোনার মান নিন্মমুখী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, কোন অনিয়ম করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এমপিওভুক্তিতেও কোন টাকা নেওয়া হচ্ছে না। আর কলেজ ছাত্রবাস ভবন নির্মাণ আমি করিনি করেছে ঠিকাদার। তিনি বলেন, আপনার কোন তথ্য প্রয়োজন হলে আপনি সরাসরি কলেজে চলে আসেন আমি তথ্য দিব।
জানতে চাইলে কলেজটির গভর্নিং বডির দায়িত্বে থাকা মকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আজিজুর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক (বেসরকারি কলেজ) তপন কুমার শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, এ বিষয়ে অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৬/০৮/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.