এইমাত্র পাওয়া

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, কঠোর আন্দোলনের ডাক ববি শিক্ষার্থীদের

তানজিদ শাহ জালাল ইমন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ৪ জুন পর্যন্ত লাগাতার মানববন্ধন ও বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।

দীর্ঘ আন্দোলন চলমান থাকলেও ইতিবাচক ফলাফল না পেয়ে আজ ৬ জুলাই (শনিবার) ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধান্ত নেওয়াদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ২০২০-২১, সমাজবিজ্ঞান ২০২১-২২, সমাজবিজ্ঞান ২০২২-২৩ লোকপ্রশাসন ২০২০-২১, লোকপ্রশাসন ২০২১-২২, লোকপ্রশাসন ২০২২-২৩, পদার্থবিজ্ঞান ২০২০-২১, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান ২০২১-২২,ইংরেজি ২০২২-২৩, সমাজকর্ম ২০২১-২২,সমাজকর্ম ২০২২-২৩ সেশন সহ আরো বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষার্থী।

ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ তারিক হোসেন জানান, আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে আমরা কোটার পুনর্বহল চাইনা,সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক কোটা বাদ দিতে হবে,২০১৮ সালে কোটা বহাল রাখাকে অবৈধ ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করা হয়েছিলো, আজ ২০২৪ এ এসে সেটাতে হাইকোর্ট কেনো হস্তক্ষেপ করবে,এটা তো নির্বাহী বিভাগের কাজ।আমরা জানি সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ” প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে”আর এটাও বলা আছে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠির জন্য কিছুটা সুবিধা দেওয়া যাবে,সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী কোটা রাখা যেতে পারে।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের সংবিধানের মুলকথা হচ্ছে সুযোগের সমতা, আমরা জানি ১৯৭১ সালে আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা পাকিস্তানের এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো,বঙ্গবন্ধু একটা বৈষম্যহীন রাষ্টের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন।কিন্তু আজ আমরা লক্ষ্য করছি ১ম, ২য় শ্রেনীর চাকরিতে ৫৬% কোটা,নন ক্যাডারে ৭১%,রেলওয়েতে ৮২%,প্রাইমারিতে ৬০% নারী কোটাসহ ৯৬ কোটা বিদ্যমান,যা সুষ্পষ্টভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন এবং মানবাধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক,আমরা অবিলম্বে এই কোটা বাতিল চাই এবং বৈষম্যবিহীন একটা রাষ্ট চাই।

মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো.আসাদ জানান, আমরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছি কারণ যোগ্যরা যদি চাকরির সুযোগ তেমন না পাই, দেশের উন্নয়নে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ভূমিকা না রাখতে পারে তাইলে ক্লাস করে পরীক্ষা দিয়ে কি হবে?? তাদের জন্য কোটা থাকলে দেশের চালিকাশক্তি কৃষক,রেমিট্যান্স যোদ্ধা, নির্মানশ্রমিক ইত্যাদি এদের ছেলেমেয়েদের কোটা কই?মুক্তিযুদ্ধ আর ভাষার চেতনা আমাদের রক্তে বইছে,যেখানে কোনো বৈষ্যম্যের স্থান নেই।আর আমরা সেই চেতনা থেকেই বলছি,,কৃষি পরিবারের ছেলে মেয়ে হয়েই বলছি, আমাদের কোটার দরকার নেই,নিয়োগে সমতা চাই।যোগ্যতা যার আছে,, দেশের উন্নয়নের দায়িত্ব তার হাতে হবে।

লোকপ্রশাস বিভাগের শিক্ষার্থী আবির হোসেন লিটন জানান, বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে যাচ্ছি না৷

ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শারমিলা জামান সেজুতি জানান, মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে একশ্রেণির মানুষ স্বার্থ হাসিল করবে সেটি মেনে নিতে পারব না। কোটাব্যবস্থা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ-প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।মেধার ভিত্তিতে যোগ্যতম প্রার্থীরাই চাকরি পাবে এটাই চাই।একমাত্র ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড যারা এবং যারা আদিবাসী তাদের জন্য কোঠা থাকাটা আবশ্যক বলে আমি মনে করি।কারণ তাদের লড়াই টা অনেক বেশি কঠিন।এ বাদে সকল কোঠা বাতিল হোক।এমনকি নারী হিসেবে আমি মনে করি নারী কোঠা থাকাটা খুবই লজ্জাজনক। যেখানে নারী-পুরুষের সাম্যের গান গাই আমরা, সেখানে কেন এই বৈষম্য? নারী কোঠা দ্বারা নারীসত্তা এবং নারীর যোগ্যতা কে ছোট করে দেখা হচ্ছে।

অচিরেই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানান এ সকল বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ। দাবী পূরণ না হওয়া অবধি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন সহ লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানান তারা।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৭/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.