এইমাত্র পাওয়া

সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের ঝাড়ুদারের কোটিপতি হওয়ার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

পদবি অস্থায়ী ঝাড়ুদার। কর্মস্থল সীতাকুণ্ড উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়। ইয়াকুব নামের এই ঝাড়ুদার একসময় ছিলেন পাশের এক হোটেলের কর্মচারী। সকালে রেজিস্ট্রি অফিস ঝাড়ু দিয়ে স্বল্প মজুরি পাওয়ার কথা যার, তিনি বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা গ্রামের ইউসুফের ছেলে ইয়াকুব কয়েক বছরের ব্যবধানেই শ্বশুর, নানি-শাশুড়িসহ কয়েক আত্মীয়ের নামে কিনেছেন বহু টাকার সম্পদ। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছে সাব-রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে তার সখ্যতা।

জানা গেছে, ইয়াকুবের সঙ্গে বনিবনা না হলে কারোর জমি রেজিস্ট্রির কাজ হয় না। কয়েকবছর আগে যখন তিনি দৈনিক ৭০ টাকা মজুরিতে অফিস ঝাড়ু দেওয়ার কাজ নেন, তখন ধীরেধীরে সাব-রেজিস্ট্রারের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। এরপর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইয়াকুব গড়ে তোলেন ঘুষ ও বাণিজ্যের বড় সিন্ডিকেট। এখন আর তাকে ঝাড়ু দিতে হয় না। অভিযোগ আছে, দলিল অনুযায়ী দরদাম করে ইয়াকুব ঘুষের অঙ্ক ঠিক করেন, সে অনুযায়ী টাকা ভাগ করে দেন সাব-রেজিস্ট্রার সহ অন্যদের।

কমিশনে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষেত্রেও ঘুষ আদায়ের অভিযোগ আছে ঝাড়ুদার ইয়াকুবের বিরুদ্ধে। এ ধরনের দায়িত্ব পালনে ঝাড়ুদারের কোনো এখতিয়ার না থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রারদের আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে তাকেই কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি কমিশন রেজিস্ট্রি থেকেও তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন।

২০০৬ সালে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঝাড়ুদার হিসেবে যোগ দেন ইয়াকুব। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদের সামনের একটি ভাতের হোটেল থেকে রেজিস্ট্রির কর্মচারীদের জন্য খাবার সরবরাহ করতেন। অফিসের ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ শুরুর পর একের পর এক সাব-রেজিস্ট্রার এলেও প্রত্যেকের কাছেই প্রিয়পাত্র হয়ে ছিলেন ইয়াকুব, ফলে অফিসজুড়ে তিনিও হয়ে ওঠেন ক্ষমতাবান। অন্যদিকে হোটেল মালিক শাহ আলমের দোকানে কর্মচারী থাকার সময়ই তার মেয়ের সঙ্গে ইয়াকুবের প্রেম হয়। অনেক অর্থবিত্তের মালিক হয়ে ওই মেয়েকেই বিয়ে করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়ায় এখন আলিশান বাড়ি আছে ইয়াকুবের। রয়েছে জমি, ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়াও সীতাকুণ্ড পৌর সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় তার শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালিকা এবং নানি-শাশুড়ির নামে নিয়েছেন জমি। পরে সেসব তার স্ত্রীর নামে হেবা দলিল করেন তিনি। নানি-শাশুড়ি সকিনা বিবির নামেও জায়গা-জমি কিনে রেখেছেন।

সীতাকুণ্ড উপজেলার আমিরাবাদ মৌজায় ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকায় ৬ শতক জমি কিনেছেন ইয়াকুব। দলিল রয়েছে সকিনা বিবি নামে নব্বই বছর বয়সী এক নারীর নামে। ওই মহিলাই সম্পর্কে ঝাড়ুদার ইয়াকুবের নানি-শাশুড়ি হন। এর আগে ২০১৬ সালে মহাদেবপুর মৌজায় কেনেন ১০ শতক জমি। যার বর্তমান মূল্য ৭০ লাখ টাকা। এছাড়াও নডালিয়া মৌজায় শাশুড়ির নামে এক একরের অধিক জমি কিনেছেন বলে জানা যায়।

ছোট পদে কাজ করেও এত সম্পদের মালিক হলেন কীভাবে, জানতে চাইলে মো. ইয়াকুব বলেন, ‘আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আমি চাকরি ছেড়ে দেবো।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব বলেন, আগে যারা সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন তারা ইয়াকুবকে কমিশনে পাঠাতেন। সেই জন্য আমিও তাকে পাঠাই। তার সম্পর্কে এরবেশি কিছু জানা নেই।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৬/০৭/২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading