ঢাকাঃ অব্যবস্থাপনা, নিয়োগে অনিয়ম ও অদক্ষ জনবলে ভেস্তে যাচ্ছে বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ। শুরুর দেড় বছরে বঙ্গবন্ধু সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রয়োজনের বিপরীতে কর্মী-চিকিৎসক নেওয়া হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ। পরিচালনায় মানা হচ্ছে না নিয়ম-কানুন। আর এতে অনিশ্চিত দক্ষিণ কোরিয়ান বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশিক্ষণও। এ অবস্থায় নতুন উপাচার্য বলছেন, প্রশ্নফাঁসের তদন্ত শেষেই আসবে বড় নিয়োগের ঘোষণা।
সাড়ে সাত শ বেডের এই হাসপাতালে চালাতে লোক দরকার ২ হাজার ৭৫৮, তবে নেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৭৬ জন। এ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বলা হচ্ছে, বেশিরভাগ পদেই সুযোগ পেয়েছে অদক্ষরা। আর্থিক অনিয়ম ছাড়াও আছে বিতর্কিতদের নিয়োগ কমিটিতে রাখার অভিযোগ।
বঙ্গবন্ধু সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সাবেক প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক জুলফিকার আলী খান বলেন, ‘নিয়োগের ব্যাপারে আমরা কিছু জানতাম না। হঠাৎ করে একজন এসে বলে আমি নিয়োগ পেয়েছি। জনবল নিয়োগে ব্যক্তিগত ইন্টারেস্ট ছিল। দক্ষ লোক নিয়োগ করা হয়নি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘আমাদের এই ক্যাম্পাসে নিয়োগ বাণিজ্যের নামে বিশাল দুর্নাম আছে। চিকিৎসক নিয়োগে আরেক চিকিৎসক টাকা-পয়সা নেয়, এটি মনে হয় শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব।’
কথা ছিল বিশেষায়িত সেবা দিতে কনসালটেন্ট পদে এখানে আসবেন দেশসেরা চিকিৎসকেরা। তবে শুরুতেই নেওয়া হয়েছে ৪৪ জন মেডিকেল অফিসার। অভিযোগ উঠেছে, একক ক্ষমতাবলে অ্যাডহক ভিত্তিতে তাঁদের নিয়েছেন সাবেক উপাচার্য। এই মেডিকেল অফিসারদের বেশিরভাগই সরকারি নয়, নানা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা।
বঙ্গবন্ধু সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল্লাহ-আল হারুনকে প্রশ্ন করা হলে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। কিছু দুর্বল জনবলও নিয়োগ পেয়েছে এমন কথা বললেও আর কোনো কথা বলেননি।
পরিকল্পনায় ছিল, এখানকার চিকিৎসকেরা বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। বিনিময়ে পদ অনুযায়ী মাসে বেতন হবে আড়াই থেকে পাঁচ লাখ টাকা। চলবে করপোরেট ব্যবস্থাপনায়, ১০ লাখ টাকা বেতনে আসবেন একজন প্রধান নির্বাহী। সেসব ভুলে গিয়ে এই স্পেশালাইজড হাসপাতালটি চালানো হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আদলে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক বলেন, ‘এখানকার চিকিৎসকেরা নন-প্র্যাকটিসিং না হলে পূর্ণ সেবা মিলবে না। এ নিয়ে দরকার হলে আলাদা করে আইন করতে হবে।’
দক্ষতা বাড়াতে প্রথম ধাপে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ১৫৯ জন। অভিযোগ আছে, অপ্রয়োজনেও সেখানে গেছেন অনেকে। ফিরে এসে আর যোগ দেননি কাজে। আর এসব অনিয়মে চিকিৎসকসহ ৫৬ কোরিয়ান বিশেষজ্ঞের কাছে স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্যদের বিশ্বমানের হাসপাতাল পরিচালনার যে প্রশিক্ষণ পাওয়ার কথা তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অধ্যাপক জুলফিকার আলী খান বলেন, ‘এই হাসপাতালের থিমটা নষ্ট করা হয়েছে। প্রতিটি জায়গাতেই থিম অনুসরণ করা হয়নি। এতে কোরিয়ান সরকারও সন্তুষ্ট না। প্রথম থেকেই ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ডিপিপি ফলো করা হয়নি।’
এ অবস্থায় নতুন উপাচার্য বলছেন, দক্ষ চিকিৎসক পেতে দরকার আলাদা বেতন কাঠামো। পরীক্ষা ছাড়া আর কোনো নিয়োগ হবে না।
অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক বলেন, ‘আমি কোনো অ্যাডহক নিয়োগ দেবো না। পরীক্ষা ছাড়া কোনো নিয়োগ হবে না। যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের বিষয় সিন্ডিকেটে তুলবো।’
স্বল্প সুদের ঋণে রাজধানীতে এমন আরেকটি হাসপাতাল করে দেওয়ার কথা ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের। তবে প্রথমটির নানা অব্যবস্থাপনায় আটকে গেছে সেই আয়োজনও।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০১/০৬/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.