কুমিল্লাঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী কর্তৃক শারীরিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সদ্য সাবেক প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম। এছাড়াও ভিসি কর্তৃক কনুইয়ের আঘাতের স্বীকার হয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ রায়হান। ফলে প্রশ্ন উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তিদের কাছেও কি অনিরাপদ শিক্ষকরা?
রবিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর ১টায় ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনকে তার কার্যালয়ে প্রবেশকালে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগেও খেলার মাঠে প্রক্টরের হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রক্টরের ইন্ধনেই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর বারবার হামলে পড়ছেন সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা৷ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমিতি কর্তৃক প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পরেও পদে বহাল রয়েছেন তিনি। ফলে প্রক্টরের হাতে নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান বলেন,‘প্রক্টর এতদিন সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করিয়েছেন। কিন্তু আজকে তিনি সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে নিজেই নগ্নভাবে শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস-উল-ইসলামকে আক্রমণ করেছেন। আমরা জানি এর আগে ফুটবল টুনামেন্টের ফাইনালেও এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন কয়েকজন সহকারী প্রক্টর। তিনি একজন ভূমিদস্যু। তিনি সন্ত্রাসী পালন করেন। শিক্ষক সমিতি এই প্রক্টরকেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। আজকে শিক্ষকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে সেটারই প্রমাণই তিনি দিয়েছেন। ভিসি এবং প্রক্টর আজকে সন্ত্রাসী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা মনে করি ভিসি এবং প্রক্টর দু’জন সন্ত্রাসী সহদর।’
অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন,‘শুধু আজকের ঘটনাই না এর পূর্বেও বিভিন্ন সময় বর্তমান প্রক্টরের মাধ্যমে অনেকেই শারীরিকভাবে নির্যাতন হয়েছে। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রকাশ্য দিবালোকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীকে চড় মারা। তখন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মাননীয় ভিসি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। প্রকৃতপক্ষে প্রক্টর ভিসির প্রশ্রয়ে দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে গেছেন। যার ফলশ্রুতিতে আজকে শিক্ষকদের ওপর এমন হামলা করলেন। ভিসির আশ্রয় প্রশ্রয়ে প্রক্টরের অতীতের অন্যায়গুলো বিচারের আওতায় না আনার কারণে আজকে ঘটনা ঘটেছে। আমি শিক্ষক এবং সাবেক প্রক্টেরিয়াল বডির সদস্য হয়ে বলতে চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রক্টেরকে বিচারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হোক। যাতে ভবিষ্যতে ছাত্র, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কারো ওপর সরাসরি কোনো হামলা না করে।’
হামলার বিষয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন,‘যে প্রক্টর নিরাপত্তার প্রধান ওনিই হামলা করেছে। সহকর্মীদের ওপর হাত তুলেছে। আসলে এ বিষয় নিয়ে আমি বাকরুদ্ধ। নিরাপত্তার প্রধানই ভিসির নির্দেশনায় হামলা করেছে, এখানে আমরা লার কাছে বিচার দিব? এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই।’
এ বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী’র সাথে মোবাইলফোনে বা কার্যালয়ের যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি৷
ভিসি বলেন, আমার কার্যালয়ে আমিতো প্রবেশ করবোই। সেখানে কেউ বাধা দিলে ছুটে আসবো এটাইত স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর ভিসির কক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কিছু দাবি দাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে দু’জন কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের সাবেক সদস্যরা শিক্ষকদের ওপর হামলা করেন। এরই জেরে তিন দফা ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি সাত দফা দাবি জানিয়ে আসছিল শিক্ষক সমিতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিল শিক্ষকরা। সবশেষ, গত (২৮ এপ্রিল) ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরসহ ভিসিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতারা শিক্ষকদের কিল, ঘুষি ও ধাক্কা দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের অবস্থান দখলে নেন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম /এএইচএম/৩০/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.