রংপুরেঃ জেলার কাউনিয়া দ্বিমুখী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষায় আর্থিক লেনদেনের অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২৩ মার্চ শিক্ষাবার্তা’য় “টাকা নিয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর, প্রধান শিক্ষকের ভিডিও ভাইরাল” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সোমবার কাউনিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আব্দুল হাকিম বলেন, গত রবিবার ইউএনওর অফিস থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে অভিযুক্ত কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এখন যেহেতু স্কুল বন্ধ তাই আপাতত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান খুললে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ২০২৪ সালের এসএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরুর আগে কাউনিয়া বালিকা বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অর্থ লেন দেন না করার জন্য ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কাউনিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হক এ বছরও শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের অভিভাবকের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাদের ফোন করে পরীক্ষা কেন্দ্র (কাউনিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে) আসতে বলেন। ফোন পেয়ে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা তার সঙ্গে দেখা করতে এলে প্রতি বিষয়ে ২৫ নম্বরের জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে দাবি করেন। বাধ্য হয়ে ভালো নম্বরের জন্য শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের চাহিদা মতো টাকা দেন।
কাউনিয়া বালিকা বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে অর্থ লেনদেনের সত্যতা পায় শিক্ষাবার্তা’র প্রতিবেদকসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা।। প্রধান শিক্ষক সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেলে শিক্ষার্থীদের সাতমাথা নব্দীগঞ্জ বাজারে দেখা করতে বলে। সেখানেও সংবাদকর্মীরা গিয়ে তাদের অনুসন্ধান চালায় এবং প্রধান শিক্ষক ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থ নেওয়ার বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে স্যোশাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরবর্তীতে শিক্ষাবার্তা’সহ কয়েকটি গণমাধ্য্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করেন।
এ বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ হলে তিনি প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে শোকজ করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে প্রধান শিক্ষক তার জবাব দিয়ে অদৃশ্য খুঁটির জোরে আজ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক পদে বহাল আছেন।
কাউনিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সহকারী শিক্ষক বলেন, এগুলো ভিডিও, অডিও করে কোনো লাভ হবে না। প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হকের খুঁটির জোর অনেক শক্ত। তিনি ডিজিতে যোগাযোগ করে সব ঠিক করে নেবেন।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিদুল হক বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শোকজের জবাব দিয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ডিসি স্যারকে সিন্ধান্ত জানিয়ে দেব।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, তার বিষয়টি তদন্তাধীন। এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, যা মন চায় লেখেন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৩/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.