শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত অর্জিত সনদধারী বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিও দিতে আর বাধা থাকছে না। তবে অ্যাকাডেমিক শিক্ষা সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়, এ ক্ষেত্রে সব কার্যক্রম সঠিকভাবে যাচাই হয়েছে কিনা তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যদিকে ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’র স্বীকৃতি বাতিল হওয়ায় সনদধারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করা হবে না।
২০২৩ সালের ১৪ জুন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ স্থগিত, বাতিল ও ছাড়করণ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের রেজুলেশন সই হয় গত ৩ এপ্রিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এবং সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ফাউন্ডেশনের সনদ প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ বিষয়ে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি সাব কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন— শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমা। আর কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন— কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. কামরুল হাসান ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ওই সময়ের উপ-পরিচালক (কলেজ) মো. এনামুল হক হাওলাদার। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন— মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. মো. ফরহাদ হোসেন।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ জারির পর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিট পিটিশনের রায় প্রচারিত হওয়ার আগে অর্জিত সনদগুলোর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল আলোচনা করে সাব-কমিটি গঠন করা হয়।
সাব-কমিটির সুপারিশের আলোকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী শিক্ষকদের এমপিও দেওয়া না দেওয়া (সনদ প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ বিষয়ে) সংক্রান্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া শান্তা মারিয়াম দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এবং সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ফাউন্ডেশনের সদন গ্রহণ করার বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে সাব-কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের যুগ্মসচিব সোনা মনি চাকমা বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের অরিজিনাল যে ট্রাস্ট ছিল সেই ট্রাস্ট যে কত সাল থেকে কত সাল পর্যন্ত কোন কোন সেশনে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে, কতজনকে সার্টিফিকেট বিতরণ করেছে, সেই তালিকা সরবরাহের সুপারিশ করা হয়েছে সনদগুলো যাচাইয়ের জন্য। আমি দায়িত্বে থাকালে অনেক কাজ এগিয়ে দিয়ে এসেছি। যাচাই সম্পন্ন হলে কারও কোনও সন্দেহ থাকতো না। যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে একটা করে কপি এবং অধিদফতরে একটি করে কপি থাকলেও এমপিও দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। একবার যাচাই করলেই পুরো বাংলাদেশের সব সনদগুলোর বিষয়ে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’
দারুল ইহসান
বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের রায় হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত ক্যাম্পাস থেকে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছে, সেসব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত এবং যাদের অনুকূলে সনদ ইস্যু করা হয়েছে, তাদের অ্যাকাডেমিক শিক্ষা সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়; এ ক্ষেত্রে সব কার্যক্রম সঠিকভাবে যাচাই হয়েছে কিনা তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করে। পরদিন (২৯ আগস্ট) কিছু গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হলে ওই দিনই ওই আদেশ স্থগিত করে আরেকটি আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়। এমপিওভুক্তির আদেশ স্থগিত করায় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারীদের একাংশ এমপিও বঞ্চিত হন। পক্ষান্তরে যাদের পক্ষে শক্তিশালী লোকজন তদবির করছেন তাদের এমপিওভুক্ত চলতে থাকে। বর্তমানে অল্প সংখ্যক শিক্ষক এমপিও বঞ্চিত আর বেশিরভাগ শিক্ষক নানাভাবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন।
শান্তা মারিয়াম
শান্তা মরিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ গ্রহণ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তথ্য চাওয়া যেতে পারে।
দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা
দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার অনুমোদন বাতিল হওয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ গ্রহণযোগ্য নয়।
সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন
সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ফাউন্ডেশনের (এসআইটি ফাউন্ডেশন) সনদ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তথ্য চাওয়া যেতে পারে।
আরও সুপারিশ
শান্ত মারিয়াম ও সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ফাউন্ডেশন (এসআইটি ফাউন্ডেশন) বিশ্ববিদ্যালয় দুটির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের রেজুলেশনে আরও সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়, সাব-কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য কো-অপ্ট করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২১/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.