খাইরুন নাহারঃ শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের ভাগ্যের, জীবনযাত্রার মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি; বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষকদের। ২০২৪ সালে এসেও এমপিওর জন্য অপেক্ষা করতে হয় ন্যূনতম ছয় মাস। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)’-এর মাধ্যমে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রার্থীরা একটি সার্টিফিকেট অর্জন করে। এরপর ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)’ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করে এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেধাতালিকাভুক্ত প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে।
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২৭২৯ প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয় এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষককে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়। দুঃখের বিষয় হলো, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় নিয়োগকৃত শিক্ষকরা বেশিরভাগই যোগদানের পরের মাসেই এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ছয় মাসেও এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। উল্লেখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় এমপিওর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে অধীনে এমপিওর জন্য হাতে হাতে হার্ডকপি ফাইল জমা করতে হয়। এখানেই শেষ নয় সেই ফাইলে যে কাগজপত্র চাওয়া হয় তাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত। মূলত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রার্থীকে সুপারিশ করলেও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সেই বিষয়গুলো আবারও যাচাই-বাছাই করে, যা অপ্রয়োজনীয় ও সময়ক্ষেপণ।
আরেকটি বঞ্চনার বিষয় হচ্ছে—স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় নিয়োগকৃত শিক্ষকরা যোগদানের তারিখ থেকে বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু কারিগরি শিক্ষকদের যোগদান থেকে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। যদিও তারা নির্ধারিত তারিখে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় যোগদান করে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পাঠদান করছেন। এ বিষয়টি তাদের জন্য অমানবিক ও নির্মম। একই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, যা শিক্ষাব্যবস্থায় দ্বৈততা তৈরি করা হয়েছে।
সুপারিশ: ১. এমপিওর জন্য হার্ডকপি ফাইল জমা নেওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে আবেদন করার ব্যবস্থা করা।
২. দ্রুত এমপিও করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বঞ্চনায় রেখে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং শিক্ষকদের আর্থিক সচ্ছলতার দিকে নজর দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখকঃ প্রভাষক তল্লাবাড়ীয়া এস.এন স্কুল এন্ড বি এম কলেজ, বিনোদপুর, মহম্মদপুর মাগুরা
মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৪/২০২৪