এইমাত্র পাওয়া

জ্ঞান ফেরেনি স্কুলছাত্রী সিনথিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মোল্লাপাড়া এলাকায় বাসা থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার স্কুলছাত্রী সিনথিয়ার জ্ঞান গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত ফেরেনি। সংকটাপন্ন অবস্থায় সে শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। একদিকে স্বামী-ছেলে হারানোর শোক, অন্যদিকে মেয়ের এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মজিদা খাতুন ডলি।

দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, করিডোরের চেয়ারে নির্বাক বসে আছেন তিনি। হাসপাতালটির অদূরেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে তাঁর স্বামী-ছেলের লাশ। আর এই হাসপাতালের বিছানায় অচেতন মেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে যেন চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে মজিদা খাতুনের। তিনি বিড়বিড় করে বলেন, ‘স্বামী-ছেলে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। এখন মেয়েটাও যদি চলে যায়, তাহলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচব?’ এ সময় তাঁকে নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন স্বজনরা।

গত রোববার সন্ধ্যায় আগারগাঁও তালতলার মোল্লাপাড়ার একটি বাসা থেকে মজিদার স্বামী মশিউর রহমান ও তাদের কলেজপড়ুয়া ছেলে মোদাব্বির হোসেন সাদাবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আহত অবস্থায় মেয়ে সিনথিয়াকে উদ্ধার করে শ্যামলীর ডক্টরস কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পুলিশের ধারণা, ছেলেকে হত্যার পর মশিউর আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে মেয়ে সিনথিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এ ঘটনায় গতকাল শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেছেন মজিদা। এজাহারে আসামি অজ্ঞাত। এ ছাড়া একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে বাবা-ছেলের লাশ ময়নাতদন্তের পর বিকেলে হস্তান্তর করা হয়। এর পর স্বজনরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাউটোনার উদ্দেশে রওনা দেন।

স্বজনরা জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আগারগাঁওয়ের মোল্লাপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন মশিউর। একসময় তিনি একটি ডেভেলপার কোম্পানির সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। পরে চাকরি চলে গেলে শেয়ারবাজারে লগ্নি করেন। কিন্তু তাতে সুফল আসেনি। সংসারে অর্থ জোগান দিতে মজিদা খাতুন শিক্ষার্থী পড়িয়ে আয় করতেন। এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদাবও শিক্ষার্থী পড়িয়ে সংসারে টাকা দিত। খরচ কমাতে বাসার একটি কক্ষ দুই ছাত্রীকে ভাড়া দিয়েছিলেন তারা। খাওয়া-দাওয়া ও থাকা বাবদ তারা ১০ হাজার টাকা দিতেন। এতে কোনোরকমে সংসার চলে যেত।

এদিকে দক্ষিণখানে ১৪ লাখ টাকায় একটি জমি কিনে প্রতারিত হয়েছিলেন মশিউর। জমির মালিক জাল দলিল দিয়ে তাঁর কাছে জমিটি বিক্রি করেন। সেই টাকাও তিনি ফেরত পাননি। কিছুদিন ধরে মশিউরের ফোনও রিসিভ করছিলেন না রতন। সব মিলিয়ে আর্থিক সংকটে থাকায় তিনি কিছুদিন ধরে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।

মশিউরের ভাইরা আবদুস সামাদ বলেন, জমির মালিক রতনের কাছে গত রোববারও আমি ফোন করি। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
মজিদা খাতুনের বোনের ছেলে আরেফিন আসিফ বলেন, তাঁর খালা-খালুর পরিবারের আর্থিক সংকটের কথা তারা শুনেছেন। কিন্তু হত্যা-আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে যাবে, তা ভাবতেও পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বজন জানান, মশিউর তাঁর এক ভাগনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে লগ্নি করেছিলেন। সেই টাকা তিনি ফেরত দিতে পারছিলেন না। এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
মশিউর যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সে বাড়ির দারোয়ান মানিক ভুঁইয়া জানান, গত শনিবার তিনি বাসার ভাড়া নিতে মশিউরের কাছে গিয়েছিলেন। সেদিন তিনি তাঁকে হতাশাগ্রস্ত দেখেছিলেন। মশিউর বলেছিলেন, তিন-চার দিনের মধ্যে ভাড়ার টাকা দিয়ে দেবেন। মানিক বলেন, তিনি কখনও বাসা ভাড়া বকেয়া রাখেননি। বাসায় ওঠানামার সময় তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেন।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি আবদুল আহাদ বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, হতাশা থেকে ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মশিউর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মশিউরের আত্মহত্যার ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/জামান/০৯/০৪/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.