Breaking News

১০০% উৎসব বোনাস : এক দেশ, এক কারিকুলাম, দুই নীতি কেন?

এ এইচ এম সায়েদুজ্জামানঃ ১৯৮০ সাল থেকে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি শুরু করে। শুরুতে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ দেওয়া হলেও ২০০৮ সাল থেকে শতভাগ বেতন দেওয়া শুরু হয়। শিক্ষকদের আন্দোলন ও দাবির মুখে ২০০৩ সালে তাত্ক্ষণিকভাবে থোক বরাদ্দ থেকে শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া হয়।

তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তী অর্থবছরে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রেখে শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া হবে। কিন্তু গত ১৯ বছরেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে।

সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে। এর সঙ্গে দুই ঈদে শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে হলে অতিরিক্ত আরো এক হাজার ১০০ কোটি টাকা লাগবে। সূত্র জানায়, ৩৯ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজধানী ও জেলা-উপজেলা সদরে বড় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বরাদ্দের বাইরে শিক্ষকদের বাড়তি কিছু ভাতা দেয়। বাকিগুলোতে সরকারি বেতন-ভাতাই ভরসা।

এমনকি ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়িয়ে আলাদা আয় করতে পারলেও অন্য শিক্ষকদের সে সুযোগ নেই। বেশির ভাগ শিক্ষকের সেই সুযোগ নেই। উৎসব বোনাস নিয়ে সারা দেশের  শিক্ষকবৃন্দের মাঝে তীব্র অসন্তোষ বা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকবৃন্দ চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। যা আমাদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

 এই ধরনের বৈষম্যে কাম্য নয়। স্বাধীনতার পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের জন্য যে সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করেছিলো বর্তমানে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। যা খুবই প্রশংসনীয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন ব্যাহত হতে পারে যদি বেসরকারি শিক্ষকরা এই  বৈষম্যের শিকার  হন।

এই বৈষম্য অব্যাহত থাকলে  মেধাবীরা শিক্ষকতায় নিরুৎসাহিত হবেন ফলে ষ্মার্ট  বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও টেকসই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।। এই বৈষম্য সৃষ্টি করে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের  মধ্যে দ্বন্দ্বের ব্যবস্থা করে দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক হচ্ছে না। এই বৈষম্য যদি চলতেই থাকে তাহলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবে না। এটা হলফ করে বলতে পারি।

বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম ও বৈষম্যমূলক। এমনকি ভারত বা পাকিস্তান থেকে আমাদের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। গবেষণা বাড়াতে হলে শিক্ষকদের নানামুখী আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষক জটিল কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য সারা জীবনের পুঁজি দিয়ে তার চিকিৎসা করতে পারে না। কারণ অনেক শিক্ষক যে বেতন পায় তাতে তার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।

কর্তৃপক্ষ শতভাগ বেতন বোনাস না দিলে  শিক্ষকরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হতে পারে। বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৫ লক্ষ। শতভাগ বোনাস  না পাওয়ায় বেসরকারি শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।  দ্রুত এর নিরসন হওয়া উচিত।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি সবার আগে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা এবং শিক্ষক-বান্ধব নীতি। অথচ দেশে শতকরা ৯৮ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর মাত্র দুই ভাগ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুই ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারিরা পাচ্ছেন শতভাগ সুযোগ-সুবিধা আর ৯৮ ভাগ শিক্ষক কর্মচারিরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ১৯ বছর ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন, যা অমানবিক।

মাধ্যমিক পর্যায়ের এন্ট্রি লেভেলের একজন শিক্ষক ১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেলে উৎসব ভাতা পান ৩ হাজার ১২৫ টাকা। মাদ্রাসার একজন ইবতেদায়ি লেভেলের শিক্ষক ৯ হাজার ৩০০ টাকা স্কেলে উৎসব ভাতা পান ২ হাজার ৩২৫ টাকা। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে কোনো শিক্ষক, কর্মচারীর পক্ষেই এত অল্প টাকা নিয়ে আনন্দের সঙ্গে ঈদ করা সম্ভব নয়।

আমরা বিশ্বাস করি,  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের জন্য যে সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করেছিলেন সেই সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রেখে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরণে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদানের ঘোষণা ও পরিপত্র জারি করে  প্রায় পাঁচ লক্ষ শিক্ষকের পরিবারে হাসি ফোটাবেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে এই প্রত্যাশা বেসরকারি শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের  ।

লেখকঃ শিক্ষক ও গবেষক

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/০৪/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

বিসিএস আন্তক্যাডার বৈষম্যের অবসান হবে কবে

তুহিন ওয়াদুদঃ বিসিএস ক্যাডারের পদোন্নতির নৈরাজ্য আজও দূর করা সম্ভব হয়নি। বিসিএসে এক ক্যাডারের সঙ্গে অন্য …