শেখ আবু জাফরঃ সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা নীতিমালার মধ্যে সামঞ্জস্যতা বিধান থাকা প্রয়োজন। সামঞ্জস্যতা বিধানে সাধারণত তিন শিক্ষা বিভাগের সমমান বা একই ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয়াবলী এক হওয়া উচিত। জনবল কাঠামোতে একই বিষয় বা পদের শিক্ষক- কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্কেল একই হওয়া এবং একই শ্রেণীতে বিষয় ভিন্ন হলেও বিষয় সংখ্যা , মোট মার্ক ও মূল্যায়ন পদ্ধতি একই হওয়া উচিত। তাহলে ,পরবর্তীতে উচ্চ ডিগ্রী বা বিশ্ববিদ্যালয়/ কলেজে ভর্তি ও চাকরির ক্ষেত্রে সমান মূল্যায়নে সুযোগ নিশ্চিত হবে। কিন্তু কারিগরি এইচএসসি (বিএমটি ) ও এইচএসসি সাধারণ শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি থাকায় ছাত্রছাত্রীরা ও এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক- কর্মচারীগণ বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে।
(১) কারিগরি এইচএসসি (বিএমটি) শাখায় ছাত্রছাত্রীদের ২২০০ মার্কের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় । অন্যদিকে এইচএসসি সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় ১১০০ মার্কের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। সকল এইচএসসি বা সমমানের জন্য একই মার্কের ব্যবস্থা এবং বিষয় ভিন্ন হলেও বিষয়ের সংখ্যা একই থাকা প্রয়োজন। এতে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়।
(২) কারিগরি শিক্ষা এইচএসসি (বিএমটি) নীতিমালায় জনবল কাঠামোর কারণে শিক্ষার্থীগণ যথাপোযুক্ত শিক্ষা লাভে বঞ্চিত হচ্ছে। এইচএসসি ( বিএমটি )শাখায় আটটি আবশ্যিক বিষয় আছে ।আবশ্যিক কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেশন এক ও দুই এবং হিসাব বিজ্ঞান নীতি ও প্রয়োগ এক ও দুই এবং অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয়ের কোন শিক্ষক নেই। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মতো প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষক থাকা দরকার।
৩) এইচএসসি বিএমটি শাখায় একাদশ শ্রেণীতে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল এবং ব্যবসায় গণিত ও পরিসংখ্যান বিষয় দুটি থাকলেও দ্বাদশ শ্রেণীতে নেই। অন্যদিকে দ্বাদশ শ্রেণীতে বিজনেস ইংলিশ এন্ড কমিউনিকেশন ও অফিস ম্যানেজমেন্ট বিষয় দুটি থাকলেও একাদশে এ দুটি বিষয় নেই। ফলে উচ্চ শিক্ষা বা অনার্স ভর্তিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই অন্য শিক্ষা ব্যবস্থার মত একাদশ ও দ্বাদশে একই বিষয় থাকা প্রয়োজন।
(৪) এইচএসসি (বিএমটি) কলেজ গুলোতে কোন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ পাঁচটি ট্রেড বা স্পেশালাইজেশন (সাধারণ শিক্ষায় মানবিক ,বিজ্ঞান ও কমার্স গ্রুপের মতো )চালু রাখা যায়। একটি ট্রেডে একটি ট্রেড বিষয় এবং আটটি আবশ্যিক বিষয় থাকে। ট্রেড বিষয় একটি থাকার কারণে ট্রেড সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। সাধারণ শিক্ষায় এইচএসসিতে মানবিক, বিজ্ঞান ও কমার্সে প্রতিটিতে তিনটি গ্রুপ বিষয় আছে। সাধারণ শিক্ষার সাথে সমঞ্জস্য রেখে প্রতি ট্রেডে তিনটি ট্রেড বিষয় রাখলে ছাত্রছাত্রীরা ট্রেড বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
৫) এমপিওভুক্ত এইচএসসি (বিএমটি )প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি ট্রেডে (স্পেশালাইজেশন) একজন শিক্ষক থাকে । একজন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সাথে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয় এবং নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সকল শর্ত পূরণ করতে হয়। তাছাড়াও ট্রেড এমপিওভুক্তিতে সকল বিষয়ের পাশের হার বিবেচনা করা হয় কিন্তু ট্রেড শিক্ষক শুধুমাত্র একটি ট্রেড বিষয় পাঠদান করান। এসব শর্তপালন করা একজন ট্রেড শিক্ষকের জন্য খুবই কঠিন। সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় এধরনের জটিলতা নেই ।
একই দেশের সমমান প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক- কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার। কিন্তু কারিগরি শিক্ষায় এই ধরনের সমসুযোগ নেই। তাই সাধারণ শিক্ষা, মাদরাসা ও কারিগরি এইচএসসি( বিএমটি )শিক্ষা ব্যবস্থায়, সকল ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা আনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, তথা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিনীত ,
লেখকঃ প্রভাষক (কম্পিউটার অপারেশন), তালা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ তালা ,সাতক্ষীরা।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.