হত্যা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। কিশোর গ্যাংয়ের বিপদ শুধু যে রাজধানীবাসীকেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে তা নয়। রাজধানীর বাইরেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের কথা জানা যায়।
নোয়াখালীতে দুই কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছে ও তিনজন আহত হয়েছে। গত বুধবার রাতে সেনবাগ উপজেলার সেবারহাট বাজারে বৈশাখী মেলায় দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বলে জানা গেছে।
দিন দশেক আগে চট্টগ্রামে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়ে মারা গেছেন একজন চিকিৎসক। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতাদের প্রশ্রয়ে কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সেখানে কোনো কোনো কিশোর গ্যাং টর্চার সেল গড়ে তুলেছে।
কিশোর গ্যাং সমস্যার সমাধান করতে হলে এর মূল কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে কীভাবে, সেখানে যোগ দেয় কারা, আর তাদের আশ্রয়-প্রশয়ইবা দেয় কারা এসব প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হীন স্বার্থে ব্যবহার করে।
পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা আপন পরিবেশে যথেষ্ট মনোযোগ না পাওয়া শিশু-কিশোররা গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে। যেসব কিশোর অপরাধ জগতে পা বাড়ায় তাদের বড় একটি অংশই কোন না কোনভাবে মাদকসেবী বলে জানা যায়। দেশে মাদক সহজলভ্য হয়ে পড়েছে।
আমরা বলতে চাই, মাদকমুক্ত এমন এক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে শিশু-কিশোররা অপরাধী হওয়ার সুযোগ পাবে না। সমাজ ও রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
কিশোর গ্যাং দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। গ্যাং কালচার থেকে শিশু-কিশোরদের ফেরাতে হবে। বিশেষ করে তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ যেন শিশু-কিশোরদের বিপথগামী করতে না পারে সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার থাকতে হবে। সমাজে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে।
শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা থেকে রক্ষা করতে পরিবারগুলোকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে সেটা জানতে হবে। শুরুতেই সন্তানকে অসৎ সঙ্গ থেকে ফেরাতে হবে।
কিশোর বয়সিদের মধ্যে সংবেদনশীল আচরণ, সহমর্মিতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা নিজ নিজ এলাকায় স্থাপিত এসব ক্লাবের সদস্য ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে।
সমাজে বিদ্যমান নানা অসঙ্গতির ওপর বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন ও সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি ক্লাবের সদস্যরা হরেকরকম খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ারও সুযোগ পাবে। প্রতিটি ক্লাবেই বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ক্রীড়া-সরঞ্জাম সরবরাহ করা ছাড়াও বই ও পত্র-পত্রিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
সব মিলে উদ্যোগটি যে প্রশংসনীয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সারা দেশে এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কিশোর অপরাধ তথা কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম ও বিকাশ রোধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ পরিবার ও সমাজের আন্তরিক ভূমিকা কাম্য।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/২৫/০৩/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.