এইমাত্র পাওয়া

যুক্তরাজ্যে বসেই বেতন তুলছেন জগন্নাথপুরের মাদ্রাসা প্রভাষক আলী আসকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ টানা ছয় মাস ধরে যুক্তরাজ্যে থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার একটি মাদ্রাসা শিক্ষক। স্থায়ীভাবে বিদেশে বাস করেও বেতন ভাতা উত্তোলন করা ঐ শিক্ষক হচ্ছেন উপজেলার হুলিয়ারপারা জামেয়া কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক মোঃ আলী আসকার (ইনডেক্স নম্বর- N1072104)। শুধু এই শিক্ষক নন একই মাদ্রাসার আরেকজন ইংরেজি শিক্ষক হেলাল উদ্দিন (ইনডেক্স নম্বর M0028115 ) চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরেও আট মাস ধরে বেতন উত্তোলন করেছেন। বিদেশে বসে এবং চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরেও বেতন-ভাতার টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দিয়েছেন খোদ মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ এবং গভর্নিং বডির সভাপতি ফয়জুল ইসলাম।

শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, হুলিয়ারপারা জামেয়া কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক মোঃ আলী আসকার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য দেশ ত্যাগ করেন। তিনি নিজের ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত একাউন্টে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ সর্বশেষ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি অনুদানের (বেতন-ভাতা) ফেব্রুয়ারী মাসের এমপিও শীটেও আলী আসকারের নামে বেতন-ভাতা এসেছে।

নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন উল্লেখ করেছে আলী আসকার। ছবিঃ ফেসবুক 

জানা গেছে, আলী আসকার ২০১২ সালের ২৫ জুলাই মাদ্রাসাটিতে ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১২ সালের ৭ আগস্ট জনতা ব্যাংক জগন্নাথপুর উপজেলা শাখায় শিক্ষক সঞ্চয় হিসাব খোলেন। যা হিসাব নম্বর (100040094894)। জনতা ব্যাংকের এই শাখাতেই হুলিয়ারপারা জামেয়া কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা জমা হয়।

সর্বশেষ মার্চ মাসে ছাড় হওয়া ফেব্রুয়ারি মাসের এমপিও শীটেও আলী আসকারের নাম ও বেতন-ভাতা। সূত্রঃ মাদ্রাসা অধিদপ্তর 

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আলী আসকার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে পারি জমালেও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতার সরকারি অংশ উত্তোলন করেন। আলী মোহসিন নামের জৈনিক ব্যক্তি শিক্ষক আলী আসকারের হয়ে বেতন-ভাতার অংশ উত্তোলন করেছেন। অন্যদিকে সর্বশেষ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের এমপিও শীটেও শিক্ষক আলী আসকারের বেতন শীটে ৩৬,৯১৬ টাকা এসেছে।

শুধু আলী আসকারই নয় একই মাদ্রাসার আরেক ইংরেজি শিক্ষক হেলাল উদ্দিন (ইনডেক্স নম্বর M0028115 ) ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরি ছেড়ে চলে যান। তিনি চাকরি ছেড়ে গেলেও ২০২৩ সালের সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত টানা আট মাস তার একাউন্টে বেতনের সরকারী অংশের টাকা এসেছে।

ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখে শিক্ষক হেলাল চাকরি ছাড়লে সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের এমপিও শীটে তার নাম। সূত্রঃ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। 

একজন বিদেশে বসে বেতন তুলছেন অন্যজন চাকরি ছেড়েও বেতন পাচ্ছেন  আর এই অনিয়মের কারিগর হচ্ছেন মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ (ইনডেক্স: S320858) এবং গভর্নিং বডির সভাপতি ফয়জুল ইসলাম।

জানা গেছে, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের তথ্য চেয়ে এরই মধ্যে দুই দফায় নির্দেশনা দেয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিকট শিক্ষকদের শূন্য পদের তথ্য চাওয়া হয়। তবে হুলিয়ারপারা জামেয়া কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসায় গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইংরেজি শিক্ষক হেলাল উদ্দিন চাকরি ছেড়ে দিলেও এবং ইংরেজি শিক্ষক আলী আসকার গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও এই দুই পদের শিক্ষক শূন্য হলেও তার চাহিদা এনটিআরসিএতে পাঠাননি অধ্যক্ষ মইনুল। এনটিআরসিএ সূত্র শিক্ষাবার্তা’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

যুক্তরাজ্যে বাস করা ইংরেজি শিক্ষক আলী আসকারের একাউন্টে বেতন যাচ্ছে স্বীকার করলেও তিনি বেতন তুলছেন না দাবি করে এ মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, সর্বশেষ এমপিও শীটে তারআর নাম নেই। তিনি বেতন তুলছেন এবং এমপিও শীটেও তার নাম আছে উল্লেখ করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে মাদ্রাসাটির গভর্নিং বডির সভাপতি ফয়জুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনেই সব কিছু করা হচ্ছে। আমাকে পেপারস দেখতে হবে তার পর বলতে পারব।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ জানাননি। আপনার থেকে শুনলাম। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, কাবিননামা তৈরিতে জালিয়াতি, বাল্যবিবাহ, দেনমোহরের টাকা কমবেশি করা, বর ও কনে পক্ষকে নানা কায়দায় প্ররোচিত করে বিবাহ দেওয়া এবং বিবাহ বিচ্ছেদকরণ, নারীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজের এমপিও স্থগিত/স্থায়ীভাবে কেন বন্ধ হবে না মর্মে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর শোকজ, “জালিয়াতির মাধ্যমে ১৭ বছর ধরে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজ!” শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশের জেরে মাদ্রাসা অধিদপ্তরে তলব, ভুয়া স্বারক ব্যবহার করে অন্য একটি মাদ্রাসায় বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনীত, জালিয়াতির মামলায় জেল খাটাসহ ইতিমধ্যে এহেন কোন অপকর্ম নেই যা মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজ করেননি।বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা চলমান রয়েছে  (মামলা নং সিআর ১৫/২০২৩, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ)। একাধিকবার শোকজ এবং গণমাধ্যমের শিরোনাম হলেও কোন এক অলৌকিক ক্ষমতার জোরে তিনি এখনও বহাল তবিয়তে আছেন।

আরও পড়ুনঃ

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০৩/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.