ফরিদপুরঃ জেলার আলফাডাঙ্গা বারাংকুলা জে এস দাখিল মাদরাসার সুপার এম এ শাহিদ মিয়ার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়দের ওই মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বই ক্রয়, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা এবং শৌচাগার-কমনরুম সংস্কারের নামে মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। এই টাকা থেকে তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টাকা কম দিয়েছেন। এছাড়া শৌচাগার-কমনরুমে নামমাত্র সংস্কার কাজ করিয়ে সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
বারাংকুলা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ১৫ জন গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক অনুদান হিসেবে ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। ছাত্র-ছাত্রী জন প্রতি ৫০০০ টাকা বরাদ্দের তালিকা করেছেন মাদরাসা সুপার। তিনি ১০ জনকে দুই হাজার ও পাঁচ জনকে দুই হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে পাঁচ হাজার টাকার ঘরে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। শুনেছি শিক্ষকদের সংগেও তিনি এমনটাই করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নামমাত্র বই ক্রয় করে তিনি ইচ্ছা মতো বিল ভাউচার করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল খান বলেন, মাদরাসার কমনরুম ও শৌচাগারে অল্প একটু কাজ দেখিয়ে সুপার এক লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রতিবারই অনিয়ম করে নিয়োগ দেন তিনি। যে পত্রিকা এলাকাবাসী পড়ে না সেসব পত্রিকায় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেন তিনি। তার ভয়ে শিক্ষকরা মুখ খুলতে চান না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক বলেছেন, আমাদের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে গড়ে আট হাজার টাকা। সেখানে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আট হাজার টাকার ঘরে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। আমরা মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আমাদের নিরুপায় হয়ে স্বাক্ষর করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
তারা আরও বলেন, মাদরাসার কমনরুম শুধু সিমেন্ট বালু দিয়ে প্লাস্টার করেছে, শৌচাগারে কিছু কাজ করেছেন। শুনেছি এ কাজ বাবদ সরকার এক লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখানে এত টাকা খরচ হয়নি। সুপার এ টাকা দিয়ে কি করেছেন আমারা কিছু বলতে পারব না।
অনুদানের টাকা পাওয়া নবম শ্রেণির হামিরা, অষ্টম শ্রেণির নাদিরাসহ অনন্ত ছয় জন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- তারা ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা পেয়েছে। এ টাকা দিয়ে সুপার তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি মাওলানা মানসুর আলী বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা, নিয়ম মেনে কাজ করা হয়েছে।
মাদরাসা সুপার এম এ শাহিদ মিয়া সমকালকে জানান, তাঁর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। সব কাজ নিয়ম মেনে করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর করা তিনটি মামলা এখনও আদালতে চলমান আছে।
তিনি বলেন, সরকার থেকে ২০২২ সালে বিভিন্ন খাতে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে এ মাদরাসার উন্নয়নে। আমরা সেটা ২০২৩ সালে পেয়েছি। কিছু কাজ এখনও চলমান আছে। এছাড়া অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দের ৭৫ হাজার টাকা ১৫ জনের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে অসহায় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বন্টন করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষকদের মধ্যে তিনজন শিক্ষক টাকা পাওয়ার আওতার বাহিরে ছিলেন, অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে কিছু টাকা কর্তন করে ওই তিনজনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
মাদরাসা সুপার বলেন, মাদরাসার উন্নয়নের জন্য একটি প্রজেক্টর কেনা হয়েছে, একটি প্রিন্টার ক্রয় করেছি। প্রতিবন্ধীদের জন্য ছয়টি হুইল চেয়ার ক্রয় করা হয়েছে, তিনটি প্রতিষ্ঠানে চলে এসেছে বাকী তিনটি কিছু দিনের মধ্যে আসবে।
মাত্র দু’জন প্রতিবন্ধীর জন্য ছয়টি হুইল চেয়ার? এ বিষয়ে তিনি বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। এছাড়া তাঁর কাছে ক্রয়কৃত মালের সব ভাউচার আছে বলে জানান তিনি।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোজ্জাম্মেল হক সমকালকে জানান, কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যদি তাঁর বরাদ্দকৃত টাকা কম পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিক। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
হুইল চেয়ারের বিষয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে হুইল চেয়ার ক্রয় করার। এখন না হয় প্রতিবন্ধী কম আছে ভবিষ্যতে আসবে।
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, যদি সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়মের কোনো অভিযোগ থাকে এলাকাবাসী আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৩/০১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.