রাজশাহীঃ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিধিবহির্ভূত ‘বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩’ প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতি এবং বিভাগের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চলমান রাখবেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে ঢাকায় গিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবেন। ‘এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন- ২০২৩’ গঠন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা প্রাণিসম্পদের পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয়। বিদায়ী সচিব এনিমেল হাজবেন্ড্রির গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় তিনি এই পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছেন।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. জাকির হোসেন বলেন, যেখানে প্রাণিসম্পদে একটি প্রতিষ্ঠিত কাউন্সিল ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯’ বিদ্যমান, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ও পক্ষপাতদুষ্ট আরেকটি কাউন্সিল ‘এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন- ২০২৩’ গঠন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে করে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ব্যহত হবে, প্রাণিসম্পদ সেক্টরের সবার মাঝে ফাঁটল ধরবে। এছাড়া আরও অনেক জটিলতা সৃষ্টি হবে। আমরা বিভেদ চাই না, ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই।
চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী কায়েস মাহাবুব সাকিব বলেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল দীর্ঘদিন ধরে ভেটেরিনারি পেশার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। হঠাৎ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা প্রাণিসম্পদের পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা এই একপাক্ষিক ও সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে কিন্তু শুধুমাত্র ভেটেরিনারি কাউন্সিল রয়েছে, এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল নামে কোনো কাউন্সিল নেই।
মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশে বিভাগের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভ শেষে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে আলামিন মোল্লা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের আহবানে আয়োজিত সভায় ‘বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩’ প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই আইন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং বিদ্যমান ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯’ এর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান ‘বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯’ এর বিভিন্ন ধারা ও উপধারা বিশেষ করে ধারা-২ এর উপধারা-১২ ও ১৫ এবং ধারা-৩০ অনুযায়ী প্রাণীসম্পদের উন্নয়ন, খাদ্য, উৎপাদন, স্বাস্থ্য চিকিৎসা, সম্প্রসারণ, প্রাণী ও প্রাণীজাত পণ্যের গুনগতমান নিয়ন্ত্রন, কৃত্রিম প্রজনন, প্রজনন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও মান নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। নির্বাচনকালীন সময়ে বিদায়ী সচিব, মৎস্য ও প্রাণীসম্মদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩’ প্রণয়নের উদ্যোগ স্পষ্টত উদ্দেশ্য প্রণোদিত, যার কোন যৌক্তিকতা নেই। বিদায়ী সচিব এনিমেল হাজবেন্ড্রির গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় তিনি এই পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছেন, যা পরবর্তীতে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে। তাই এ সিদ্ধান্ত দ্রত বাতিল করতে হবে।
এ সময় তারা দুইটি দাবি পেশ করেন। দাবি দুইটি হলো অনতিবিলম্বে ‘বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন-২০২৩’ প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং প্রাণীসম্পদ উন্নয়নের স্বার্থে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরে ভেটেরিনারি এবং এনিমেল হাজবেন্ড্রি গ্রাজুয়েটদের দ্বন্দ্ব নিরসনে অধিদপ্তরে কর্মরত এন্ট্রি লেভেল কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমন্বিত কোর্স চালু করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের আহ্বানের বাস্তবায়ন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.