ঢাকাঃ ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হতে পারে। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হওয়ার কৌশল ও প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরেন ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত (সমাজকল্যাণ) মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন।
বর্তমানে এনটিআরসিএ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগের সুপারিশ করে, যা আগে ছিল না। স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা একটু সহজ হলেও কলেজ পর্যায়ের প্রশ্ন কঠিন হয়ে থাকে। তাই প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি না রেখে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত।
পরীক্ষার পদ্ধতি
প্রিলিমিনারিতে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান প্রতিটিতে ২৫ করে ১০০ নম্বর। আগে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নম্বর কাটা যেত। তবে এবারের সার্কুলারে .২৫ নম্বর কাটার কথা বলা হয়েছে। পাস নম্বর ৪০ শতাংশ বলা থাকলেও বাস্তবে আরও কিছু বেশি নম্বর প্রয়োজন হয়। তবে ৫০-এর বেশি নম্বর পেলে প্রিলিমিনারি পাসের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়।
জব সলিউশন
শিক্ষক নিবন্ধনের স্কুল পর্যায়, স্কুল পর্যায়-২ এবং কলেজ পর্যায়ে বিগত সালের থেকে অনেক প্রশ্ন রিপিট হয়। তাই এই পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি পাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো জব সলিউশন ভালোভাবে আয়ত্ত করা। নিবন্ধনের সব পর্যায়ের বিগত সালের প্রশ্ন, ৩৫-৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রশ্ন, প্রাইমারি ও সম্প্রতি হয়ে যাওয়া অন্যান্য জব সলিউশনের প্রশ্নের সমাধান করা অপরিহার্য।
বাংলার প্রস্তুতি
বাংলায় বেশির ভাগ প্রশ্ন ব্যাকরণ থেকে হয়ে থাকে। সাহিত্য থেকেও অল্প কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে। ব্যাকরণের জন্য ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, বাগধারা ও বাগ্বিধি, ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, যথার্থ অনুবাদ, সন্ধিবিচ্ছেদ, কারক বিভক্তি, সমাস ও প্রত্যয়, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংকোচন ও লিঙ্গ পরিবর্তন পড়তে হবে। সাহিত্য অংশের জন্য প্রাচীন ও মধ্যযুগসংক্রান্ত আগের প্রশ্ন, আধুনিক যুগের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম, ছদ্মনাম, উপাধি, প্রবর্তক, পত্রিকা ও সাময়িকী সম্পর্কে জানতে হবে। সহায়ক বই হিসেবে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ, অগ্রদূত বা এমপিথ্রি বাংলা গাইড পড়া যেতে পারে।
গণিতের প্রস্তুতি
যেকোনো চাকরির পরীক্ষায় গণিতের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণিতের মূল ভিত্তি শক্তিশালী করতে হলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বোর্ড বইয়ের অঙ্কগুলো চর্চার কোনো বিকল্প নেই। ইউটিউবে গণিতের ভালো ভালো টিউটোরিয়াল আছে, যেগুলো দেখে গণিতের ভিত্তি পাকাপোক্ত করা যায়। এ ছাড়া দৈনিক কিছু সময় গণিতের চর্চা করলে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। জব সলিউশনের গণিতের আগের প্রশ্নগুলো নিজে নিজে সমাধান করবেন। গণিতের মৌলিক ধারণার পাশাপাশি শর্ট টেকনিকও শিখে যাবেন, যাতে পরীক্ষার কেন্দ্রে স্বল্প সময়ে সমাধান করতে পারেন। শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদকষা, ঐকিক নিয়ম, গড়, লসাগু, গসাগু, অনুপাত-সমানুপাত, সূচক, লগারিদম, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, বাস্তব সংখ্যা, বর্গ ও ঘনের মান নির্ণয়, সমীকরণ, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতি এবং জ্যামিতির মৌলিক বিষয়গুলো পড়তে হবে। আর সহায়ক বই হিসেবে খাইরুল’স বেসিক ম্যাথ ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির গণিত বোর্ড বই পড়লে পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।
ইংরেজির প্রস্তুতি
ইংরেজির মৌলিক বিষয়গুলো যেকোনো একটি গাইড বই থেকে ভালোভাবে আত্মস্থ করে নিতে হবে। এরপর জব সলিউশনের দুই-তিন বছরের প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। ফ্রেজ ইডিয়ম, গ্রুপ ভার্বস, অ্যাপ্রোপিয়েট প্রিপোজিশন, স্পেলিং নিয়মিত পড়তে হবে। ইংরেজি শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য নিয়মিত যেকোনো একটি ভোকাবুলারির বই সিনোনিম অ্যান্টোনিমসহ পড়তে হবে। ইংরেজির জন্য গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর উল্লেখযোগ্য হলো: Completing Sentences, Translation from Bengali to English, Change of Parts of Speech, Right forms of verb, Fill in the blanks with appropriate word, Transformation of sentences, Synonyms & Antonyms ও Idioms & Phrases। এ ছাড়া কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য Errors in composition, Identify appropriate title from story or article, Uses of article, appropriate preposition-এর প্রস্তুতি নিতে হবে। সহায়ক বই হিসেবে মাস্টার-জাহাঙ্গীর আলম ও চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইনের উচ্চমাধ্যমিক ইংরেজি গ্রামার পড়া যেতে পারে।
সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি
নিবন্ধনের সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ-সম্পর্কিত বিষয়, আন্তর্জাতিক বিষয় ও চলতি ঘটনাবলি এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও রোগব্যাধি-সম্পর্কিত মৌলিক জ্ঞান এই তিন ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ-সম্পর্কিত বিষয়াবলির মধ্যে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু, শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, যোগাযোগব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ (বন, শিল্প, কৃষি, পানি), জাতীয় দিবস ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন হতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা, বিভিন্ন দেশ পরিচিতি, মুদ্রা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ, আন্তর্জাতিক দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন থাকে।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান (পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট), তথ্য-যোগাযোগপ্রযুক্তি, সাধারণ রোগব্যাধি, খাদ্য ও পুষ্টি, আবিষ্কার ও আবিষ্কারক এবং জলবায়ু ও পরিবেশবিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট প্রশ্ন থাকে। এ-সংক্রান্ত বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার আগের প্রশ্নগুলো রপ্ত করলেই হবে। এ ক্ষেত্রে সহায়ক বই হিসেবে এমপি থ্রি সাধারণ জ্ঞান ও কনফিডেন্সের সংক্ষিপ্ত সাধারণ জ্ঞান পড়তে পারেন একজন পরীক্ষার্থী।
সব প্রস্তুতি একসঙ্গে
সব বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য গাজী মিজানুর রহমান স্যারের শিক্ষক নিবন্ধন অ্যানালাইসিস বইটি খুবই ভালো। তবে বাজারের অন্য যেকোনো গাইড বই অনুসরণ করলেও চলবে। যাঁরা বিসিএসকেন্দ্রিক বিষয়ভিত্তিক আলাদা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য আলাদা নিবন্ধনের গাইড পড়ার প্রয়োজন নেই। তাঁদের বিগত জব সলিউশন পড়লেই যথেষ্ট। এ ছাড়া Live MCQতে নিয়মিত শিক্ষক নিবন্ধন বাটনে পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের যাচাই করে নিতে পারেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.