এইমাত্র পাওয়া

অবসরে গিয়েও বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবারো যেভাবে অধ্যক্ষ থাকেন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বয়স ৬০ বছর পেরুলেই অধ্যক্ষ পদ থেকে সরে যেতে হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অবসের যান না। নানা কৌশলে নীতিমালা ফাঁক দিয়ে আবারো অধ্যক্ষ পদে থেকে যান কীভাবে। এ নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটির তুলে ধরা হলো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সংক্রান্ত বিধিমালায় পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অধ্যক্ষকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ারও সুযোগ নেই’। কিন্তু বয়স ৬০ বছর পার হলেও অধ্যক্ষ পদে বহল রয়েছেন এমন কলেজের সংখ্যা অন্তত অর্ধশত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এ ক্ষেত্রে নিরব। চোখের সামনে ঘটলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ৬০ বছর পর অধ্যক্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার সুযোগ না থাকলেও বিধিমালায় সাধারণ শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার পরও ৫ বছর পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সংক্রান্ত বিধিমালায় বলা আছে, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত কলেজের কোন শিক্ষকের বয়স যেদিন ৬০ বছর পূর্ন হবে সে দিন থেকেই তিনি কোনরুপ সেশন বেনিফিট ছাড়াই অবসর গ্রহণ করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, একজন শিক্ষকের বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করলেও গভর্নিং বডি কলেজের পাঠদানের স্বার্থে তার চাকরির মেয়ার ৬৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারেন।’

এই ধারার সুযোগ নিচ্ছেন গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষ। এই ধারার সুযোগ নিয়ে অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষকে কলেজের সাধারণ শিক্ষক হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। এরপর ওই শিক্ষককে (অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব দেয় গভর্নিং বডি। এ ক্ষেত্রে নীতিমালার ব্যত্যয় না হলেও অনৈকতার আশ্রয় নেয়া হয়। কারণ অধ্যক্ষরা ক্লাস নেন না। আর পাঠদানের স্বার্থে তাকে শিক্ষক হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন না। তাকে নিয়োগ দেয়া হয় অধ্যক্ষ হিসাবে বসানোর জন্য। আর নীতিমালাও অমান্য হয় এই কারণে যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পাবার পর তিনি আর শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ক্লাস নেন না।

আরো এখানে অনিয়মও হয়। কারণ কোন কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যখন কেউ নিয়োগ পান। বেশিরভাগই তো ওই কলেজের শিক্ষক ছিলেন না। তাহলে তাকে বিভাগে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের কী সুযোগ আছে ? এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা বলেন, সুযোগ নেই। তবে কিছু কিছু কলেজে এভাবে হচ্ছে। বিষয়টি আমরা একটা নীতিমালার মধ্যে আনবো। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের মেয়াদ চুক্তিভিত্তিক বাড়ানোর জন্য আবেদন আসে। যেখানে প্রয়োজন আমরা শুধু সেখানেই অনুমোদন দিচ্ছি। এক সময়ে ও্ই অধ্যক্ষকে ওই অধ্যক্ষকে ওই কলেজে কাজ করার একটা অর্ডার দেই। তারা কী ক্লাস নেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আামরা ক্লাস নেয়ার জন্য বলে দিচ্ছি। তিনি অধ্যক্ষ অথচ তারা ওই সাবজেস্ট এফিলিয়েশনই নেই। তাহলে তাকে নিয়োগ দিয়ে লাভ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। আলোচনায় বসবো।

আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় ৬০ বছর পর অধ্যক্ষ হবার সুযোগ কম। দুএকজায়গায় করেছে ব্যক্তিক্রমভাবে। মন্ত্রণালয় যখন এ সংক্রান্ত বিধি পরিবর্তন করেছে আমাদের সাথে আলোচনা করেনি। একা একা করেছে। মন্ত্রণালয়ের কারণেই আমরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান বাতিল করেছি। এখন মন্ত্রণালয় আমাদের সাথে আলোচনা না করেই তাদের বিধান পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আমরা আমাদের আগের নিয়মে রয়ে গেছি। মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অভিন্ন হলে মানুষের ভোগান্তি কম হয়।

শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাবার পর তারা পাঠদান করেন না ? এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নির্ভর করে গভর্ণিং বডির ওপর। গভর্নিং বডি যদি মিথ্যা এস্টেটমেনট দিয়ে নেয় আমাদের কী করার আছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ নিজের এলাকার কলেজগুলোতে নীতিমালা না মেনে অবসরপ্রাপ্তদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস করছে না। আর এই সুযোগ নিয়ে অন্যান্য কলেজগুলোতেও অবসরপ্রাপ্তদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আদেশে বলা হয়, কলেজে অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে/অধ্যক্ষের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে উপাধ্যক্ষ/জ্যেষ্ঠতম পাঁচজন শিক্ষকের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে এবং পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের এক বছরের মধ্যে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সই করা কাগজপত্র ও কার্যবিবরণী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃত অথবা গৃহীত হবে না। যদিও এই বিবৃতি কাগুজে কলমে। কোন বাস্তবায়ন নেই। ##

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.