ঢাকাঃ আজ থেকে ২০ বছর আগে যখন ছিল ডিভিশন পর্ব। প্রথম বিভাগ থেকে স্টারমার্ক স্ট্যান্ড এভাবেই মূল্যায়ন করা হতো। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে হারিয়েছেন আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ার বেদনায়। অন্যদিকে প্রত্যাশিত কলেজ হারানোর বেদনা। এরপর ওই ট্রেডিশন ব্যর্থ করে দিয়ে আসলো সৃজনশীল অথবা কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি। আর ফলাফল হল গ্রেডিং সিস্টেম জিপিএ। জিপিএ ৫ এর পেলে আবার জিজ্ঞেস করা হয় গোল্ডেন পাওনি? গোল্ডেন জিপিএ হল সুপার মডেল আর তাই শুধু জিপিএ ফাইভ পেলে অভিভাবকের মন ভরতো না। মূল্যায়ন টি কতটুকুই সঠিক ছিল? ৮০–১০০ পেলে জিপিএ গোল্ডেন এখন যে ৮০ পেলো সে আর যে ১০০ পেলো সে শিক্ষার্থীর মূল্যায়নই বা কতটা সঠিক হতো?
আর সৃজনশীল প্রশ্ন সেটা কতটা সৃজনশীল ছিল, শিক্ষকরাই ভালো বলতে পারবেন। অপরদিকে শিক্ষার্থী কতটাই উচ্চতর দক্ষতার পরিচয় দিত পেরেছে তা তারা যেমন জানে না তেমনি শিক্ষকরাও ধোঁয়াশার মধ্যে থাকেন। বরাদ্দকৃত ৪ নম্বর দিলেও সবই বই প্রদত্ত। উত্তরগুলো উচ্চতর কিংবা তার মতামতের ধারে কাছেও ছিল কিনা সন্দেহ আছে। যদি থাকতো তা হয়তো গুটিকয়েক জনের খাতায় পাওয়া যেত। সময়ের আবর্তে তারও অবসান হতে চলেছে এসেছে নতুন কারিকুলাম। আমার ধারণা মতে যদি করোনার মত মহামারী না আসতো তবে সরকার মহলে হয়তোবা এমন চিন্তা আসতে আরো সময় লেগে যেত। করোনাকালীন সময়ে অফুরন্ত সময় ধরে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিপুল পরিবর্তন এবং সময়পযোগী ধারণা প্রয়াসের সুযোগ এসেছিল তা পরবর্তীতে নতুন কারিকুলাম এর কাছে আসতে সাহায্য করেছে বলে মনে করি। দুই বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকলেও কিভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা চালিয়ে যাবে তা যেমন একটি পদ্ধতির ফলে বের হয়েছিল, তেমনি নতুন কারিকুলাম ও অন্যরকম পদ্ধতি।
নিশ্চয়ই এ পদ্ধতি সময়ে ফল ভোগ করাবে হয়তোবা পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ। অভিভাবকদের একটাই চিন্তা তাদের বাচ্চাদের পড়াশোনা নেই কী করবে? কিভাবে ব্যস্ত রাখবে তাদের? কীভাবে শাসন করে একটু টাইট দিয়ে রাখা যায়? এত এত টাকা শিক্ষকদের না দিলে কিভাবে টাকা খরচ করতে পারি? কিংবা টাকা কোথায় রাখি? কোচিং না করলে কিভাবে আমার আর সন্তানের সময় কাটবে? বোধ হয় এগুলোই তাদের সমস্যা। তারা বলছেন আমার সন্তান মেধাবী কিন্তু সে তো মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য পরামর্শ থাকলো নতুন কারিকুলাম কে স্বাগত জানান। কেননা মেধা কখনো রেজাল্টে নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনে সে কতটা সফল সেটাই আসল কথা। প্রসঙ্গ যখন সন্তানের পড়া নেই? কী করবেন? রাখুন না আপনার সন্তানের জন্য শিক্ষক পরীক্ষায় পাস করার জন্য না হয় নাই পড়লো। আপনি তাকে কোন বিষয়ে দক্ষ করতে চান সে বিষয়ে পড়ান। শিক্ষকের পাশাপাশি সন্তানকে ব্যস্ত রাখুন গান, অভিনয়, আবৃত্তি, পত্রিকা পড়তে দিয়ে, টিভি দেখতে দিয়ে।
পরিবারের সবাই মিলে গঠনমূলক পারিবারিক সিনেমা শিশুতোষ সিনেমা, অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলার সিনেমা দেখুন। মেধাবী সবাই এমনিতেই থাকে। পরিবেশ পরিস্থিতি মেধাবী করে দেয় উপযুক্ত চর্চার মাধ্যমে। মেধাবী পরিচয় ঠিকই দেবে এজন্য ধৈর্য ধরুন অপেক্ষা করুন নতুন কে স্বাগত জানান। সময় ফলাফল বলে দিবে তা না হলে পরিবর্তন তো আছেই। আবারও পরিবর্তন আসবে না হয়! যেমনটি আগেও ঘটেছিল কিংবা হয়েছিল।
আসুন পরিবর্তনের ছোঁয়াই নিজেকে পরিবর্তন করে প্রগতিশীল হয়ে উঠি। যোগ্য ও বিশ্ব নাগরিক গড়ে তুলতে ধৈর্যের সাথে সাহায্য করি। সময়কে সময় দিতে থাকলে সময় কথা বলবে। না হলে এই অযোগ্য সন্তানের ফলাফল পরবর্তীতে যোগ্য সন্তান হিসেবে দেশ উপহার দিবে নিশ্চয়ই। আগামী প্রজন্মই সেদিন নিয়ে আসবে। তারা জাগ্রত হলেই নতুন সকাল হবে নতুন সূর্যের উদয় হবে।
লেখকঃ নাজনীন লাকী
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.