এইমাত্র পাওয়া

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হচ্ছে খুদে ডাক্তার কার্যক্রম

নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলুঃ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উভয়ই সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। কথায় আছে, ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বসবাস, শিখন-শেখানো কাজে যা অপরিহার্য। শিক্ষিত স্বাস্থ্যবান প্রতিটি শিশুই দেশের ভবিষ্যৎ সুনাগরিক। দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুশিক্ষার পাশাপাশি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ যত্নবান। আমাদের বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুটোরই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হচ্ছে খুদে ডাক্তার কার্যক্রম।

‘খুদে ডাক্তার’ হলো বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে বাছাইকৃত সাদা অ্যাপ্রোন পরিহিত রুচিশীল, মার্জিত, চটপটে স্বভাবের একদল নবীন স্বেচ্ছাসেবী। এরা প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে সহপাঠীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে এবং সেই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য-সচেতন করে গড়ে তোলার কাজে হরহামেশাই নিয়োজিত।

পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিটি শিশু স্বাস্থ্য-সচেতন হয়ে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার লক্ষ্যে ২০১১ সালে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে খুদে ডাক্তার কার্যক্রম শুরু হয়। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্য-সচেতন ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার তাগিদ রয়েছে।

সাধারণত তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির চার থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থী নিয়ে একেকটি খুদে ডাক্তার দল গঠন করা হয়। প্রতি দলে ছাত্রছাত্রী উভয়ই খুদে ডাক্তার হিসেবে কাজ করে থাকে। তবে দল কিংবা ছাত্রছাত্রী সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুপাতে কম-বেশি হতে পারে।

আগেই বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিখন দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ এবং তা নিরাময়ের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুদে ডাক্তারের দল গঠন করা হয়। এসব স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তাররা বছরে দুবার নির্ধারিত সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সহপাঠী ভাইবোনের ওজন, উচ্চতা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট ফরমে নোট রাখে। দলে নিয়োজিত সদস্যরা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নেয়। শ্রেণি শিক্ষক গাইড হিসেবে তাদের কাজ তদারকি করেন, যাতে প্রতিটি শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রেকর্ড সংরক্ষিত হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলাকালে কারও অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি, উচ্চতার সঙ্গে ওজনের তারতম্য পেলে কিংবা দৃষ্টিশক্তির ত্রুটিসহ নানা বিষয়ের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা গাইড শিক্ষককে অবহিত করে।

শিক্ষকরা অভিভাবকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শিক্ষার্থীর ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে কথা বলেন এবং সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা প্রদান করেন। এ ছাড়াও আমাদের খুদে ডাক্তাররা বিদ্যালয়ে যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত নিম্নে সে সম্পর্কে কতিপয় দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো-

ক্ষুদে ডাক্তাররা তার সহপাঠীদের স্বাস্থ্য সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়মকানুন শিক্ষাদান করেন। বিশেষ করে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া, দাঁত ও চুল পরিষ্কার, নিয়মিত নখ কেটে পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে সহপাঠীদের পরামর্শ প্রদান করে।

এ স্বেচ্ছাসেবীরা বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের বছরে দুবার সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করায়, যাতে শিশুরা কৃমির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। সরকারের জাতীয় টিকা দিবস উদযাপন ও জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করার কাজেও খুদে ডাক্তাররা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা করে থাকে।

বর্তমানে সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বর এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এ রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুর হার। এডিস নামক এক ধরনের মশা এ রোগের বাহক। এদের সমূলে ধ্বংস করতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এটা সম্ভব। আমাদের খুদে ডাক্তাররা বিদ্যালয়ের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে এডিস মশার বিস্তার রোধ করার পাশাপাশি এ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।

আমাদের শিশুদের বিরাট অংশ পুষ্টিহীন। দারিদ্র্য ও খাদ্যের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অসচেতনতা এর প্রধান কারণ। পুষ্টিহীনতা শিশুর শিখন-শেখানো কাজে বড় বাধা। খাদ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা থাকলে সস্তা খাবারের মাধ্যমেও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। বিদ্যালয়ের খুদে ডাক্তাররা এ ধরনের সমস্যাগ্রস্ত শিশুর অভিভাবকদের নিয়ে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলেন, যাতে তারা তাদের আহরিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দ্বারা সমাজ থেকে পুষ্টিহীনতার অভিশাপ দূর করতে পারেন।

আজকের এই খুদে ডাক্তাররাই হয়তো আগামী দিনে একেকজন সেবাব্রতী আদর্শ ডাক্তার হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। ছোটবেলায় স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে সেবার মতো মহান কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া এসব ডাক্তাররা কর্মক্ষেত্রেও এর প্রতিফলন ঘটাবে। এতে দেশের সব স্তরের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে। ফলে জাতির এ সম্ভাবনাময় নতুন প্রজন্মের হাত ধরে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় এক নবদিগন্ত উন্মেচিত হবে।

লেখকঃ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.