হরতাল অবরোধ:পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

শিক্ষাবর্ষের শেষ দুই-তিন মাসজুড়ে বিভিন্ন স্তরে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে বার্ষিক পরীক্ষা। ইতোমধ্যে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হওয়ায় পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তবে শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচি না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান শিক্ষা প্রশাসনের। শিক্ষা প্রশাসনের নির্দেশে বার্ষিক পরীক্ষাগুলো নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার প্রস্তুতিও ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর।

গতকাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছিল বিএনপি ও জামায়াত। এদিন রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনানুষ্ঠানিক বন্ধ ছিল। কোথাও কোথাও খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। অভিভাবকদের মধ্যে ছিল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। জানা যায়, কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রবিবারের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল।

পশ্চিম রামপুরাস্থ স্কাইলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোসাম্মত শাহিন জানান, স্কুলটি মেইন রোড থেকে আড়ালে থাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ। প্রতিদিনের মতো গতকালও স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রেখেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। এখন স্কুল বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। বার্ষিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে নভেম্বরে।

এখন পর্যন্ত স্কুল বন্ধের পরিস্থিতি হয়নি। তবে সামনের দিনগুলো নিয়ে চিন্তিত। মোহাম্মদপুরের বরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদা পারভীন বলেন, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল অর্ধেকের মতো।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কোনো ঝুঁকি না নিতে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ আগের হরতালগুলোতে খোলা রাখলেও গতকাল শিক্ষার্থীদের আসতে নিষেধ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মুর্শেদা শাহীন ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে শুধু অফিস খোলা রেখেছি। কিন্তু অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ। আগে হরতালের মধ্যে খোলা রাখতাম। তবে অভিভাবকদের আপত্তিতে এবার এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিনাত মহল বেলী বলেন, হরতালের প্রভাবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি একেবারে কম ছিল।

রাজধানীর মতিঝিল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম বলে, বার্ষিক পরীক্ষার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে তার। সারা বছরের প্রস্তুতি ছিল। এখন যেভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি আসছে কীভাবে সে স্কুলে যাবে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. দুলাল হোসেন বলেন, একদিনের রাজনৈতিক কর্মসূচির যে চিত্র দেখলাম, তাতে বাচ্চাদের স্কুলে দেওয়া রীতিমতো ভয়ের ব্যাপার।

সহিংসতার রাজনীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, স্কুল খোলা রাখলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে দিতে নিরাপদবোধ করছেন না। আমরা চাই, রাজনীতিক দলগুলো শিক্ষার ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচি দেবে না।

শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে এখন রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো শুরু হয়েছে। এ নিয়ে আমরা বেশি উদ্বিগ্ন জানিয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, আমরা ২০১৪-১৫ সালের নমুনা দেখতে পাচ্ছি। এটি ভয়ের ব্যাপার। বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা এখন। সামনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। রাজনৈতিক সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আমরা।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বছরের শুরুতে আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে। তারাও সে প্রস্তুতি নিয়েছিল। আমার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচি যেন তারা না দেন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩০/১০/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.