এস এম আতিয়ার রহমানঃ উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্যরে চেয়েও বেশি। এদেশের একজন কৃষক-শ্রমিকের মতো স্বল্প-আয়ের মানুষের সন্তানও আজ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস দিয়ে বা ব্যাংকসহ বিভিন্ন পেশায় গিয়ে জীবনের স্বপ্নপূরণ করতে পারছে। হয়তো সামগ্রিকভাবে এ সংখ্যা কম। আবার যে সংখ্যায় পাশ করছে; সে তুলনায় বেকারের সংখ্যা বেশি। তবে বেসরকারি চাকরি ছাড়াও স্বকর্মসংস্থান ও উদ্ভাবনমূলক পেশাতেও যুক্ত হচ্ছে উচ্চশিক্ষিত তরুণরা, আবার বিদেশেও যাচ্ছে অনেকে। এই যে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের সন্তান আজ উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে, এর ইতিবাচক দিকই বেশি। কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে অনেকেই বলে থাকেন, সবার উচ্চশিক্ষার দরকার নেই। কিন্তু কাকে আপনি বাধা দেবেন? তবে এটা ঠিক, বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীকে বিশ্বের চাহিদার দিকে সংগতি রেখে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ দিলে তারা দক্ষ জনসম্পদে পরিণত হতে পারে।
জাতিসংঘে শিক্ষাকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষালাভে কাউকে নিবৃত করা যাবে না। অর্থাৎ যে কেউ চাইলে শিক্ষার পরের স্তরে যেতে পারবেন। জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ অবারিত রাখতে হবে। আমাদের দেশে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ৮০-৮৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভে আগ্রহী হয়। এটা বিশ্বজনীন উপাত্তে অনেক উপরে। উচ্চশিক্ষা লাভে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ভর্তি হতে না পেরে কিংবা সামর্থ্য ও সামাজিক কারণে অথবা উপার্জনের চিন্তায় ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা বা সংশ্লিষ্ট কোর্সে ভর্তি হয়। এ সংখ্যাও দুই লাখের বেশি। এদের মধ্যে মেধাবীও আছে।
ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা তো চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করে। উচ্চমাধ্যমিকের তুলনায় তাদের কোর্স ক্রেডিট বেশি। তাছাড়া তারা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সমমানের উপরে। একজন ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্নকারীর বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অবশ্যই বেশি। তারা ডিপ্লোমা পাস করে সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি কিংবা এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির সুযোগের দাবি রাখে। তারা উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণদের থেকে পিছিয়ে থাকবে নাকি এগিয়ে থাকবে সেটা অবশ্য দেখার বিষয়। তবে এটা ঠিক, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন, জাতিসংঘের সনদ ও সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতার বিচারে দেশে ডিপ্লোমা কোর্সে উত্তীর্ণরা উচ্চশিক্ষা লাভের অধিকার রাখে।
আশার কথা, আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কথা ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। সেখানে ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হবে, এ প্রত্যাশা অভিজ্ঞ মহলের। একইসঙ্গে এমবিবিএস কোর্সে যে ভর্তি পরীক্ষা হয়, সেখানে তদসংশ্লিষ্ট ডিপ্লোমা উত্তীর্ণদেরও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। যারা ডিপ্লোমা পাস করেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি-উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগে অন্তত ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ডুয়েটে উচ্চশিক্ষা লাভে সুযোগদানের মতো কৃষি, চিকিৎসা বা অন্যান্য ডিপ্লোমা উত্তীর্ণদের জন্য এরূপ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে বিশেষায়িত শিক্ষার সুযোগ রাখা যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
লেখক: পরিচালক (পিআরএল), জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.