এইমাত্র পাওয়া

‘যৌন নিপীড়ক’ শিক্ষককে রক্ষা করতে চায় প্রশাসন

ঢাকাঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে গঠিত স্ট্রাকচার্ড কমিটি ৪০ দিনেও কাজ শুরু করতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত হয়নি যে তারা কমিটিতে আছেন।

গত ১০ আগস্ট উপাচার্যের সভাপতিত্বে নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে একই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি ও অধিকতর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সিন্ডিকেট সভা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস জানায়, দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুসারে স্ট্রাকচার্ড কমিটি ৬ সদস্য বিশিষ্ট হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য। এ ছাড়া নিজ অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, দুজন সিন্ডিকেট সদস্য এবং রেজিস্ট্রার এই কমিটির সদস্য মনোনীত হন। স্ট্রাকচার্ড কমিটির কার্যক্রম উপাচার্যের আহবানে সংগঠিত হয়। সে হিসেবে মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে গঠিত এই কমিটিতে আছেন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান মাহফুজা মোবারক এবং সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ-উল আলম।

জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম বলেন, ‘পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি স্ট্রাকচার্ড কমিটিতে আছি। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাইনি। এ ছাড়া স্ট্রাকচার্ড কমিটি কবে বসবে সে বিষয়েও অবগত না।’

পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সভাপতি মাহফুজা মোবারক সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্ট্রাকচার্ড কমিটিতে আছি তা শুনেছি, তবে আমাকে অফিসিয়ালি কোনো চিঠি দেওয়া হয় নি। অসুস্থ আছি তাই এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’

গত বছরের ২১ নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জনি ও একই বিভাগের প্রভাষক আনিকা বুশরা বৈচির একটি অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁস হয়। একইসঙ্গে বিভাগের শিক্ষক পদে আবেদনকারী ৪৩ ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রায় ২৭টি অন্তর‌ঙ্গ আলাপন প্রকাশিত হয়। যেখানে মাহমুদুর রহমান জনি ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর বিষয়টি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে।

এতে আন্দোলন গড়ে উঠলে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নিয়মিত সিন্ডিকেটে নৈতিক স্খলন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এসময় জনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

এছাড়া জনির বিরুদ্ধে দায়মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগ উঠলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেয়। পরে জনির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

পরবর্তীতে জনিকে দায়মুক্তি দেওয়ার শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা আবারো আন্দোলন শুরু করেন। ১৩ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার বাইরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেদিন আন্দোলনের চাপে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ হয়নি বলে জানায় সিন্ডিকেট।

এই প্রেক্ষিতে আবারও অধিকতর তদন্তের জন্য ১৩ই মার্চ স্পষ্টীকরণ কমিটি গঠন করে সিন্ডিকেট।

সর্বশেষ ১০ আগস্ট স্পষ্টীকরণ কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু জনিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

স্ট্রাকচার্ড কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো মিটিং হয় নি। তবে কবে বসা যায় তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।’

উপাচার্যের ‘গড়িমসি’

এদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি খামে উপাচার্যকে গালিগালাজ করার অডিও ক্লিপ সম্বলিত ডিভিডি, একটি দায়মুক্তিপত্র প্রত্যাহারের আবেদন ও একটি উড়ো চিঠি সাংবাদিকদের পাঠানো হয়।

‘যৌন নিপীড়ক জনিকে বাঁচাতে তৎপর উপাচার্য, নেপথ্যে…’ শিরোনামে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান রীতি অনুসারে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনীত যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিললে অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়। তবে জনির ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। সে বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্যরা কথা বললে সিন্ডিকেটের সভাপতি (উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম) সুকৌশলে জনিকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।’

প্রাথমিক সতত্য নিশ্চিত হওয়ার পরেও জনিকে বহিষ্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্যকে গালাগালি করা ও উপাচার্য পদে নিয়োগে জনির প্রভাব থাকার এমন ন্যক্কারজনক অডিও ফাঁসের পরেও যদি উপাচার্য তার বক্তব্য স্পষ্ট না করেন, এমনকি কোনো ব্যবস্থা না নেন তাহলে সবাই বুঝবে যে জনি যা বলেছে- তা সত্য। এক্ষেত্রে উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারাবেন। তিনি সবসময় তার কাছের শিক্ষকদের নানা অপকর্মে নিরব থেকেছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন। উপাচার্যের এমন আচরণের কারণেই তারা এসব অপকর্ম দ্বিগুণ উৎসাহের সাথে বারংবার ঘটাচ্ছে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/০৯/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.